সোমা মজুমদার: বাজির আতঙ্কে যাঁরা ঘরে থাকেন কিংবা বাচ্চার হাতে ফুলঝুরি তুলে দেন না, তাঁরা কি ঠিক করেন? উঁহু! সেক্ষেত্রে যে বাড়ির খুদেটাকে বঞ্চিত করা হয় আনন্দ থেকে। অতএব, রং-মশাল, হাওয়াই নিশ্চিন্তে জ্বালান৷ চোখকে দেখতে দিন রঙিন আলোর ঝলকানি৷ শুধু একটু সাবধানে! একটু সতর্ক হয়ে বাজি পোড়ালেই বিপদকে দূরে রাখা যায়৷ তবু সামান্য ভুলচুকে অঘটন ঘটলে কী করবেন, সেই পরামর্শই দিচ্ছেন বিশিষ্ট ডাক্তাররা৷
চোখ বাঁচাতে:
১) বাচ্চারা যেন একা একা বাজি না ফাটায়৷
২) বাচ্চাদের বাজি হাতে করে ফাটাতে দেবেন না৷
৩) চোখ থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রেখে বাজি ফাটান৷
৪) বাজি ফাটানোর সময় কাছাকাছি এক বালতি জল রেখে দিন৷ চোখে লাগলে প্রথমে ঠান্ডা জল দিতে হবে৷
৫) বাজির ধোঁয়া চোখে ঢুকে গেলে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলে আরাম হবে৷
৬) বারুদ জাতীয় দ্রব্য ধরার পর অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে৷
৭) যাঁদের চোখে পাওয়ার নেই, তাঁরা চোখ বাঁচাতে পাওয়ার ছাড়া চশমা পরতে পারেন৷
৮) বাজির মশলা ঢুকে চোখে যন্ত্রণা, অস্বস্তি অথবা যে কোনও সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷ দেরি হলে বিপদের সম্ভাবনা থাকে৷
বাজি থেকে চোখের ক্ষতি:
১) বাজির কণা চোখে ঢুকলে যন্ত্রণা হতে পারে৷
২) কর্নিয়ায় ঢুকে গেলে চোখে ইনফেকশন হবে৷ রোগী চোখ খুলতে পারবেন না৷ আলোতে তাকাতে অসুবিধা হবে৷
৩) অনেকসময় তুবড়ি বা রংমশাল ফেটে চোখের গ্লোব ব়্যাপচার ফেটে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে৷
৪) বাজির মশলা চোখে লাগলে চুলকানি এবং কনজাংটিভাইটিস হয়৷
৫) বাজির ঠোঙা থেকে চোখে অস্বস্তি বোধ হতে পারে৷
আরও জানতে সুশ্রুত আই ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের কনসালট্যান্ট আই সার্জন ডা. কুমকুম ঘোষকে ফোন করুন এই নম্বরে- 9830030171। বিশদে জানতে ক্লিক করুন epaper.sangbadpratidin.in
ত্বকের যত্ন নিন:
সুতির জামাকাপড় পরে বাজি ফাটান৷ ফুলহাতা জামা এবং ঢাকা জুতো পরে বাজি ফাটাতে পারেন৷ বাজি ফাটানোর জায়গায় খালিপায়ে হাঁটা উচিত নয়৷
১) হাতে-পায়ে আগুনের ফুলকি লাগলে ঠান্ডা জল দিন৷
২) শরীরের কোনও অংশ পুড়ে গেলে আলু থেঁতো করে ক্ষতস্থানে দিলে তৎক্ষণাৎ উপকার পাওয়া যায়৷
৩) পুড়ে যাওয়া অংশে ডিমের সাদা অংশ দিলে জ্বালা কমে যাবে৷
৪) বাজির আগুন থেকে মারাত্মকভাবে পুড়ে গেলে কিংবা বাজি ফাটানোর পরে ত্বকের কোনও সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷
৫) বাজি ফাটানোর পরে পোড়া বাজির অংশ নির্দিষ্ট জায়গায় না ফেলে দিলে তা লেগে পা পুড়ে যেতে পারে৷ বাজির আগুন থেকে বেরনো আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি অনেক সময় ত্বকের ক্ষতি করে দেয়৷
৬) ন্যূনতম দূরত্ব না রেখে যে কোনও ধরনের বাজি, পটকা হাতে করে ফাটালে ত্বক পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ বাজিতে সালফার, পটাসিয়াম, তামা, লোহাচুরের মতো দ্রব্য থাকায় তা ত্বকের উপর পড়লে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে৷
আরও জানতে ডার্মাটোলজিস্ট ডা. রথীন্দ্রনাথ দত্তকে ফোন করুন এই নম্বরে- 9153319842। বিশদে জানতে ক্লিক করুন epaper.sangbadpratidin.in
অ্যালার্জি থেকে সাবধান:
১) কোনও বদ্ধ জায়গায় বাজি ফাটানো উচিত নয়৷ একই সঙ্গে যে জায়গার বাজি ফাটানো হবে তার চারপাশের জানলা-দরজা বন্ধ রাখতে হবে৷ যাতে বিষাক্ত গ্যাসের ধোঁয়া বাড়ির মধ্যে ঢুকে না যায়৷
২) হৃদরোগ, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা রোগীরা বাজি থেকে দূরত্ব বজায় রাখবেন৷
৩) বাজি ফাটানোর জায়গার কাছাকাছি ধূমপান করা উচিত নয়৷ কারণ এতে বাজির গ্যাস আরও বিষাক্ত হয়ে ওঠে৷
বেশি জলপান:
শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷ যে কোনও ধরনের অ্যালার্জি রোগীর শরীরকে সবসময় ডিহাইড্রেট করে৷ তাই বেশি পরিমাণে জল খেতে হবে৷ অ্যালার্জি হলে অথবা শ্বাসকষ্টে ভুক্তভোগী রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত৷
অসাবধানতায় কষ্ট:
১) গ্রামের থেকে শহরের দূষণের মাত্রা বেশি হওয়ায় শহরের বাতাসে বাজির মধ্যে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার, কার্বন মনোঅক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস ও বাজির অ্যালুমিনিয়াম, লোহা, ক্যাডমিনিয়ামের মতো কণা মিশে দূষণের মাত্রা অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়৷ এর জন্য সুস্থ মানুষেরও শ্বাসকষ্ট হতে পারে৷
২) দূরত্ব বজায় না রেখে বাজির কাছাকাছি গেলে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি যেমন সর্দি, গলা ব্যথা, গলার সংক্রমণ, মাথা যন্ত্রণা, মুখ ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়৷
৩) হৃদরোগ, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, সিওপিডির মতো রোগে আক্রান্ত হলে বাজির বিষাক্ত গ্যাস থেকে অসুস্থ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে৷ কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়৷
৪) কোনও বাচ্চার অ্যাজমার সমস্যা থাকলে অনেকসময় বাজি-পটকার ধোঁয়া থেকে প্রবল অসু্থ হয়ে পড়তে দেখা যায়৷ এছাড়া সঠিক সতর্কতা অবলম্বন না করলে সেই ধোঁয়ার কারণে সুস্থ বাচ্চাদের শরীরেও প্রভাব পড়ে৷
আরও জানতে অ্যাপোলো গ্লেনিগলস হসপিটালের পালমোনলজিস্ট ডা. সুস্মিতা রায়চৌধুরিকে ফোন করুন এই নম্বরে- 9836967500। বিশদে জানতে ক্লিক করুন epaper.sangbadpratidin.in
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.