শাকের গুণাগুণ নিয়ে বললেন ডায়েটিশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী।
শীতকাল মানেই নানারকম শাক। শীত যাই যাই বললেও শীতের বাজার অন। এখনও বাজারে নানা ধরনের শাকের উপস্থিতি নজরকাড়া। পালং, মেথি, মটর, সরষে, লাল, নটে, গিমা, মুলোশাক তো রয়েছেই, আরও অনেক চেনা-অচেনা তালিকাও রয়েছে শাকসবজিতে। সবাই সব শাক শীতকালে নিয়মিত না খেলেও বেশির ভাগই কম-বেশি বাড়িতে নিয়ে আসেন। কারণ শীতকালে যে কোনও শাক সহজপাচ্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর।
- শাক অর্থাৎ লিফি ভেজিটেব্ল ওয়েট ম্যানেজমেন্টে যেমন তুখড়, তেমনই লো-ক্যালরি সমৃদ্ধ। শাকসবজিতে উচ্চমানের ডায়েটরি ফাইবার থাকার দরুন ক্যানসার এবং হৃদযন্ত্রের যে কোনও রোগের সম্ভাবনা কমিয়ে ফ্যালে একলাফে অনেকটা।
- শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং প্রচুর ফাইটো কেমিক্যাল। যেমন, লুটেনইন, বিটা ক্রিপটোজানথিন (cryptoxanthin), জিয়া জানথিন (Zeaxanthin) ও বিটা ক্যারোটিন।
- গবেষণা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, রোজ ভাতের পাতে পরিবেশিত শাকসবজি বা লিফি ভেজিটেব্ল কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার সম্ভাবনা কমিয়ে ফ্যালে প্রায় ১১ শতাংশ হারে।
- গ্রিন স্যালাড সারাদিনে বারবার খেলে যে কোনও রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা বহুলাংশে কমে যায়। কারণ এর মধ্যে থাকে অধিক পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম এবং এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স লো। অর্থাৎ স্যালাড খেলে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেই থাকে।
- এক বাটি গ্রিন লিফি ভেজিটেব্ল ৯ শতাংশ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা কমিয়ে ফ্যালে, বিশেষ করে টাইপ টু ডায়াবেটিসের পেশেন্টের জন্য মহার্ঘ শাকপাতা।
- শাকপাতার মধ্যে রয়েছে অতি উচ্চমাত্রার ভিটামিন কে, যা শরীরে অস্টিওক্যালশিয়াম উৎপাদনে সক্ষম। যা হাড়ের স্বাস্থ্যরক্ষায় ভীষণ কার্যকরী।
[ মেকি হিরোইজম নয়, ক্যানসার রোগীর মনোবল বাড়ান স্বাভাবিক আচরণে ]
- মাঝবয়সি মহিলাদের হিপ ফ্র্যাকচারের সম্ভাবনা ৪৫ শতাংশ কমে যায় রোজ খাদ্যতালিকায় শাক থাকলে।
- শাকপাতা আয়রন ও ক্যালশিয়ামের সেরা উৎস। পালংশাক বা বিটশাকে ক্যালশিয়াম কম থাকে কারণ এর মধ্যে রয়েছে উচ্চমানের অক্সালিক অ্যাসিড।
- সবুজ শাকসবজি বিটা ক্যারোটিনে সমৃদ্ধ। এই বিটা ক্যরোটিন ভিটামিন-এ তে রূপান্তরিত হয়ে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করে তুলে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে বাড়ায়।
- আমাদের দেশে কিংবা গোটা পৃথিবীর শিশুদের অন্ধত্ব বা কম দৃষ্টিশক্তির কারণ ভিটামিন এর অভাব। যা আসে সবুজ শাকসবজি থেকে।
- লুটেইন এবং জিয়াজানথিন ক্যারোটিনয়েড সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় গাঢ় সবুজ শাকসবজি থেকে। চোখের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এর। বিশেষ করে চোখের রেটিনা ও লেন্সকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। শুধু ছোটদের বয়োজ্যেষ্ঠদের চোখ সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
- লাং ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা কমায়। সারাদিনে অন্তত বার তিনেক এক বাটি করে শাকসবজি স্যালাড, সেদ্ধ বা স্যুপ খেলে পাকস্থলীর ক্যানসারের সম্ভাবনা কমে যায়।
- পালংশাক শাকসবজির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত রান্নাঘরে। এর কারণ এর স্বাদ আর গুণ। পালংয়ের পুষ্টিগুণ অনবদ্য। এই শাক দেহকে এনার্জিতে ভরপুর করে রাখে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আয়রন আমাদের লোহিত রক্তকণিকার কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে, যা রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ এবং তার সঞ্চালন উন্নত করে। ডিএনএ সিন্থেসিস করে। পালংয়ে রয়েছে উচ্চমানের অতিমাত্রায় ভিটামিন কে, এ, সি, ফোলেট, ম্যাগনেশিয়াম, ও ভিটামিন বি-টু, ফাইবার, লুটিন, কামফেরল নিউট্রিয়েন্টস, কোয়েরসেটিন, জিয়াজানথিন। ব্লাড প্রেশার, ব্লাড ক্লটিং, কিডনি স্টোন, ক্যানসার প্রতিরোধে অপ্রতিরোধ্য পালংশাক।
[ আধুনিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সারিয়ে ফেলা যায় শ্বেতি ]