সমলিঙ্গের প্রতি এক অমোঘ টান। এটা কি কোনও অসুখ? না কি সমস্যাটি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির? আপনজনও এদের প্রতি কতটা সুবিচার করে? বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে ওরা। তাহলে কেন বাঁকা চোখে তাকানো? কেন চুপচুপ-ফিসফাস? কেউ বলে দিব্যি সুস্থ, কারও মতে অসুস্থ সম্পর্ক। মেডিক্যাল সায়েন্স কী বলছে? উত্তর খুঁজতে কেয়ারিং মাইন্ডস-এর মনোবিদ ডা. প্রথমা চৌধুরির কাউন্সেলিং ডায়েরির পাতা ওল্টালেন পৌষালী দে কুণ্ডু।
সমলিঙ্গের প্রতি কেন টান: সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। চিকিৎসা মহলে নানা গবেষণা চলছে। মেডিক্যাল সায়েন্সের দাবি, এর পিছনে হরমোনের তারতম্যের কারণ বলেই এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে। মনে করা হয়, গর্ভাবস্থায় বা শিশুর জন্মের কয়েক বছরের মধ্যেই শরীরে এমন কিছু হরমোনের ভারসাম্যে তারতম্য হয় যার কারণে বয়ঃসন্ধিকাল থেকে সে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করে সমলিঙ্গকে পছন্দ করতে শুরু করে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের বিষয়টি মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ ঠিক করে। যাদের ওই গর্ভাবস্থা বা তার দু’-তিন বছরের মধ্যে হরমোনজনিত কোনও পরিবর্তন হয় তাঁদের ক্ষেত্রে হাইপোথ্যালামাস সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণকে ইঙ্গিত করে। পুরুষ হরমোন, স্ত্রী হরমোন ক্ষরণের তারতম্যে বিষয়টিও এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়। তবে বয়ঃসন্ধিকালের পর বা অন্য কোনও সময় শরীরে স্ত্রী-পুরুষ হরমোনের মাত্রার তারতম্যের জন্য অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের পুরুষালি চেহারা, দাড়ি-গোঁফের যে সমস্যা দেখা যায় তার সঙ্গে সমকামিতা সংক্রান্ত হরমোনের সম্পর্ক নেই।
মেয়েদের পুরুষালি চেহারা বা ছেলেদের মেয়েলি নরম চেহারা, ঈষৎ স্ফীত বুকের পিছনে প্রজেস্টেরন, টেস্টোস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণ থাকে। এই মুহূর্তে যত গবেষণা হয়েছে তার মধ্যে এই হরমোন ডিসব্যালেন্সের কারণটিকেই সঠিক ব্যাখ্যা বলে মনে করা হচ্ছে। মনস্তাত্ত্বিক কোনও কারণ পাওয়া যায়নি। দেখা যায়, দীর্ঘদিন হস্টেলে থাকতে থাকতে বা জেলে বন্দি থাকতে থাকতে অনেকের সমলিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণ হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এঁরা কিন্তু প্রকৃত সমকামী হন না। পরিস্থিতির কারণে অর্থাৎ বিপরীত লিঙ্গের কাউকে না পাওয়ায় তাঁরা সাধারণত এমন আচরণ করেন।
জেন্ডার ডিসফোরিয়া: এমন কিছু পুরুষ আছেন যাঁরা মনে করেন ছেলে না হয়ে তাঁরা মেয়ে হলেই ভাল হত। মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে চান তাঁরা মেয়ে। পোশাক, আচরণ সবকিছু মেয়েদের মতো করতে থাকেন। আবার ঠিক উল্টোটাও হয়। কিছু মহিলা পুরুষের মতো হাবভাব করেন। ছেলে হলেই ভাল হত বলে মনে করেন। এই আচরণকে বলা হয় জেন্ডার ডিসফোরিয়া। এটিও গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন হয়। জেন্ডার ডিসফোরিয়া থাকলেই যে সেই ব্যক্তি সমকামী হবেন তার মানে নেই। আবার হবেন না তাও নয়। কেউ কেউ ছোট থেকেই এমন ক্রস জেন্ডার আচরণ করেন, বয়ঃসন্ধির পর হয়তো ঠিক হয়ে যায়। আর যাঁদের এই আচরণের পরিবর্তন হয় না এবং সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ কমে না তাঁরা সমকামী থাকেন।
জরুরি কাউন্সেলিং: বাঁ-হাতিকে যেমন জোর করে ডান হাতি করা যায় না তেমনই যাঁরা প্রকৃত সমকামী হন তাঁদের ইচ্ছা ও স্বভাবের পরিবর্তন কোনওভাবেই করা যায় না। তাদের এই স্বভাবকে অস্বাভাবিক, ঘৃণ্য মনে করাটাই ভুল। বাকিদের মতো তাঁরাও সুস্থ-স্বাভাবিক এটা মনে করে তাঁদের কাছে টেনে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে বাবা-মায়েরা সমাজের ভয়ে নিজের ছেলে বা মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের যৌন পরিচয়ের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন না। এক্ষেত্রে পরিবারের মধ্যে জানাজানি হওয়ার পর প্রথমেই অশান্তি, উৎকণ্ঠা, ঝগড়া, কান্নাকাটি চলে। এই অবস্থা কাটাতে এবং পরস্পরের প্রতি সুন্দর মানসিকতা ফিরিয়ে আনতে মনোবিদের কাছে সবার কাউন্সেলিং করতে যাওয়া উচিত। অনেক সময়ই ছেলেমেয়ের সমকামিতার কথা জেনে দ্রুত জোর করে তার বিয়ে দিয়ে দেন পরিবারের সদস্যরা। অনেকে আবার নিজের প্রকৃত পছন্দের কথা অভিভাবকদের মুখ ফুটে বলতে না পেরে বাধ্য হয়েই বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। এভাবে প্রবৃত্তিকে দমন করা উচিত নয়। সে ক্ষেত্রে কেউই সুখী হতে পারেন না।
যোগাযোগ : ৯৮৩৬৪০৩৭৬৬
আরও জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.