জিনিয়া সরকার: বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মোট ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ৩-৪ লক্ষ৷ যার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মুখ ও গলার ক্যানসারে আক্রান্ত৷ এই ধরনের ক্যানসারের জন্য দায়ী জীবনযাপন ও দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস৷ বিশেষ করে ধূমপান বা অন্য তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার। আসলে সব বুঝেও যে অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন! কিন্তু বেরোতেই হবে৷ না হলে মুখগহ্বরে কর্কটের থাবা থেকে বাঁচা দুষ্কর৷
অভ্যাসই রোগের মূল:
মুখ ও গলার ক্যানসারের কারণ হিসাবে দেখা গিয়েছে, ৯১ শতাংশ ক্ষেত্রেই তামাক জাতীয় দ্রব্যই দায়ী৷ ধূমপান, জর্দা, খইনি, নস্যি, গুটখা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার অনেকেই করেন৷ মুখগহ্বরের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তা থেকেও হতে পারে ক্যানসার৷ দাঁতভাঙা থাকলে যদি দীর্ঘসময় ধরে জিহ্বায় ঘা হয়, গালে দাঁত লেগে তা থেকে ঘা হয়েও দেখা দেয় ক্যানসার৷ লাল লঙ্কা খাওয়ার অভ্যাস থেকেও দেখা দিতে পারে এই সমস্যা৷ অ্যালকোহলের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি থাকলেও ওরাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ১০ গুণ বেড়ে যায়৷
পূর্বলক্ষণ:
১) দীর্ঘদিন সিগারেট, গুটখা খেলে মুখগহ্বরের বিভিন্ন্ কোষের মধ্যে নানা পরিবর্তন দেখা যায়৷ যা থেকে ঘা ও রক্তক্ষরণ শুরু হয়৷ সাধারণ ঘা এক থেকে দু’সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়৷ কিন্তু এক্ষেত্রে সারতে চায় না৷ মুখে দুর্গন্ধ হয়৷ ব্যথা বাড়ে৷
২) দীর্ঘদিন তামাকদ্রব্যের ব্যবহারের ফলে মুখের মধ্যে সাদা-কালো দাগ দেখা যায়৷ যা প্রি-ক্যানসার৷ এই লক্ষণ দেখা যাওয়ার পরও যদি ৪-৫ বছর একই অভ্যাস চালিয়ে যাওয়া হয় সেক্ষেত্রে ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে৷
৩) মুখ খুলতে বা হাঁ করতে খুব সমস্যা হয়৷ হাঁ ছোট হয়ে যায়৷ যাকে বলা হয় সাবমিউকাস ফাইব্রোসিস৷
কখন আশঙ্কা:
যদি মুখে ঘা বা আলসার থেকে রক্তক্ষরণ হয়, তবে তা চিন্তার বিষয়৷ মুখে দুর্গন্ধ, খেতে অসুবিধা, হাঁ করতে কষ্ট, সারাক্ষণ মনে হবে মুখের মধ্যে কিছু আটকে আছে, পরের দিকে জিহ্বায় ব্যথা বাড়া, কথা বলতেও কষ্ট হওয়া৷ এরকম হলে এবং মুখের ঘা এক-দেড় মাসেও না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷
শরীরের কোন অংশে বেশি প্রভাব:
জিহ্বা, ঠোঁট, মুখ বা গালের ত্বক, মুখের তালু, মাড়ি – যে কোনও জায়গা ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে৷ তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জিহ্বায় এই ক্যানসারের থাবা বেশি পড়ে৷ তা থেকে গলায় ছড়ায়৷
জরুরি টেস্ট:
যে কোনও ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রেই মূল টেস্ট বায়োপসি৷ এক্ষেত্রেও মুখের ঘা থেকে মাংসের টুকরো নিয়ে টেস্ট করে দেখা হয়৷ ধরা পড়লে সিটি স্ক্যান, এমআরআই করে দেখা হয় কোন স্টেজে ক্যানসার আছে৷ মুখের ক্যানসার সবসময়ই খুব দ্রুত গলায় ছড়িয়ে যায়৷ গলার লিম্ফনোডে বা গ্ল্যান্ডে ছড়িয়ে যায়৷ তাই গলায় ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড দেখা গেলে এবং চিকিৎসা করে না কমলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷ প্রয়োজনে দরকার গলার গ্ল্যান্ডের নিডল বায়োপসি৷ ক্যানসার প্রমাণিত হলে সেইমতো চিকিৎসা জরুরি৷
বদল চাই:
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় তামাক দ্রব্যের ব্যবহার নেই, তাও এই ক্যানসারে আক্রান্ত৷ মুখগহ্বরের অপরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি অস্বাভাবিক যৌন সংসর্গও দায়ী৷ যা থেকে জন্ম নেয় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি ভাইরাস৷ জিহ্বার পিছন দিকে টনসিল, অর্থাৎ মুখগহ্বরের পিছনের অংশে এই ভাইরাস জন্মায়৷ যা থেকে ইনফেকশন হয়ে ক্যানসার হয়৷ দায়ী ওরাল সেক্স৷ বর্তমানে এদেশের অল্পবয়সিদের মধ্যে এই কারণের জন্য ওরাল ক্যানসার বেশি হচ্ছে৷
সুরক্ষা কবচ:
১) তামাক থেকে দূরে থাকুন৷ মুখগহ্বর সবসময় পরিষ্কার রাখুন৷
২) তামাক, অ্যালকোহল একসঙ্গে সেবন অভ্যাস অবশ্যই ছাড়ুন৷
৩) দীর্ঘদিন ধরে মুখে সংক্রমণ থাকলে সতর্ক হোন৷
৪) দাঁতে ক্ষত থাকলে ফেলে না রেখে তার চিকিৎসা জরুরি৷
৫) এই ক্যানসার এড়াতে দিনে দু’বার অবশ্যই দাঁত মাজুন৷ খেয়ে মুখ ভাল করে ধুতে হবে৷
আরও জানতে যোগাযোগ করুন: ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায়, সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট, 9051977539। অথবা পড়ুন epaper.sangbadpratidin.in
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.