বহু শিশুরই নিত্যসঙ্গী ইনহেলার। একরাশ আশঙ্কা নিয়েই অনেকেই সেটি ব্যবহার করেন। কিন্তু হাঁপানির কষ্ট কমাতে এ জিনিস নেওয়া কি ভাল? স্টেরয়েডে ক্ষতি নেই? এই প্রসঙ্গে এসএসকেএম হাসপাতালের বিশিষ্ট পালমোনলজিস্ট ডা. সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি সোমা মজুমদার।
ঋষি জন্মের সময় বেশ ভালই ছিল। কিন্তু কয়েক বছর পরেই শুরু হয় অ্যাজমার সমস্যা। মাত্র সাড়ে তিন বছর থেকে নিত্যদিনের সঙ্গী ইনহেলার। ধ্রুব আবার জন্মের পর থেকেই ঠিকমতো নিশ্বাস নিতে পারছিল না। ডাক্তার সদ্যোজাত শিশুটিকে নেবুলাইজার নেওয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে এত ছোট বয়স থেকে ইনহেলার নেওয়ায় তাদের অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। মা-বাবার ভয়, ইনহেলারে স্টেরয়েড থাকায় পরবর্তীকালে তাদের সন্তানের কোনও ক্ষতি না হয়ে যায়!
বর্তমানে যতদিন যাচ্ছে তত ছোট বয়স থেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই খুদেদের ইনহেলার ব্যবহার করার পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এতে অনেকের মনেই আশঙ্কা জাগছে তাহলে কি স্টেরয়েড থাকার জন্য ইনহেলার নেওয়ায় শিশুর কোনও ক্ষতি হচ্ছে? চিরাচরিত এই ধারণা একেবারেই ভুল। স্টেরয়েড ছাড়াও ইনহেলার হয়। ডাক্তারের পরামর্শমাফিক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইনহেলার ব্যবহার করলে বাচ্চা দিব্যি সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
স্টেরয়েড থাকলেও ভয় নেই: কোনও ওষুধে স্টেরয়েড রয়েছে শুনলেই সাধারণত মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, তাও কেন ওষুধে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়? কারণ, স্টেরয়েড হল ম্যাজিক ড্রাগ। স্টেরয়েডের মতো এত ভাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ আর নেই। স্টেরয়েডে সাইড এফেক্টের চেয়ে পজিটিভ ফল অনেক বেশি পাওয়া যায়। কিছু রোগের ক্ষেত্রে স্টেরয়েডের বিকল্প কিছু হয় না। বিভিন্ন মাধ্যমে রোগীকে স্টেরয়েড দেওয়া হয়। এটি সাধারণত দু’রকমের হয়। সিস্টেমেটিক ও লোকাল।
ইনহেলারের সঠিক ব্যবহার: ইনহেলার ব্যবহারের আগে ও পরে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মানা উচিত। সঠিকভাবে ব্যবহারের নিয়ম জানতে হবে। নির্দ্বিধায় স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করুন। ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে মাঝপথে বন্ধ করলে শ্বাসনালীতে ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ বেড়ে যায়। সাধারণত, এই প্রদাহ প্রাথমিক পর্যায়ে ইনহেলার ব্যবহারের মাধ্যমে কমানো সম্ভব। কিন্তু প্রদাহ বেড়ে গেলে আর সারানো সম্ভব নয়। তাই যতদিন পর্যন্ত ডাক্তার পরামর্শ দেবেন ততদিন ইনহেলার ব্যবহার করুন।
কোন বয়সে ইনহেলার: সাধারণত ইনহেলার নেওয়ার জন্য কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হলেই ছোটদের ইনহেলার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। জন্মের পর থেকে শিশুর নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা হলে নেবুলাইজার দেওয়া হয়। একটু বড় হলে ইনহেলার ব্যবহার করা যায়। সাধারণত তিন বছর বয়সের আগে যদি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হয় তাহলে বেশিরভাগ সময়ে তিন বছরের পর থেকে ইনহেলার ব্যবহার বন্ধ করা যায়। আবার তিন বছরের পর ইনহেলার নেওয়া শুরু করলে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সে অনেক সময় ইনহেলার ব্যবহার বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ইনহেলারের প্রভাব: আগে ভাবা হত যে, ইনহেলারের ব্যবহার শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। কিন্তু পরে ধরা পড়েছে, হয়তো ইনহেলার ব্যবহার করার সময় শিশুর বৃদ্ধির হার আর পাঁচটা শিশুর থেকে একটু কম হয়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছে স্বাভাবিক বৃদ্ধিই হয়। এছাড়া খুব ছোট বয়স থেকে দীর্ঘদিন ইনহেলার ব্যবহার করলে বাচ্চাদের গলা ভেঙে যায় এবং মুখে কিছু সংক্রমণ হতে দেখা যায়। তবে সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে ইনহেলারের তেমন কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।
সচেতন হোন: আপনার শিশুকে যদি ইনহেলার নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় তাহলে অযথা ভয় পাবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক সঠিক পদ্ধতি মেনে শিশুকে ইনহেলার ব্যবহার করতে দিন। বরং সঠিক সময় ইনহেলার না নিলেই আপনার সন্তানের শ্বাসনালীতে ক্ষতি হতে পারে। তাই অযথা আতঙ্কে ভুগবেন না।
ইনহেলার ব্যবহার করুন: ইনহেলার হল এমন একটি মাধ্যম যা সরাসরি ফুসফুসে ওষুধ পৌঁছে দিতে পারে। কিন্তু ট্যাবলেট খেলে তা প্রথমে রোগীর পাকস্থলিতে যায়। তারপর পাকস্থলি থেকে লিভারে ও সেখান থেকে রক্তে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে শরীরের সর্বত্র ওষুধ রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যার একটি নির্দিষ্ট অংশ রোগীর যেখানে প্রয়োজন সেই জায়গায় পৌঁছায়। এই সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে সরিয়ে ইনহেলার সরাসরি ফুসফুসে ওষুধ পৌঁছে দিতে পারে। অন্যদিকে, ইনহেলারে ব্যবহৃত স্টেরয়েড অত্যন্ত কম মাত্রার ও লঘু প্রকৃতির। যা শরীরে অনেক দ্রুত ও নিরাপদে কাজ করে। সাধারণত হাইডোজের ট্যাবলেট খেতে হয়। সেখানে ইনহেলার কম ডোজেই কাজ করে।
যোগাযোগ : ৮৩৩৪৯৯৩০৯০
আরও পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.