কোয়েল মুখোপাধ্যায়: উলটপুরাণ হয়তো শুনেছেন, কিন্তু উলটকায়া? দেখেনওনি। শোনেনওনি। তাই তো? কিন্তু বাস্তব অন্য কথা বলছে। এই ধরনের মানুষের অস্তিত্ত্ব অবশ্যই আছে। বুঝিয়ে বলা যাক।
উলটকায়া। মানে দেহের সবকিছু উলটোপালটা। অর্থাৎ ধরুন, এই যেমন হৃৎপিণ্ড। প্রত্যেকের শরীরে থাকে বুকের বাঁ দিকে। কিন্তু এমনও কেউ আছেন, যাঁর শরীরে তা রয়েছে ডান দিকে। আবার ধরুন যকৃৎ এবং গল-ব্লাডার। এমনিতে থাকে শরীরে ডান অংশে। কিন্তু এমনও কেউ আছেন, যার ক্ষেত্রে দুটোই অবস্থান করছে একেবারে বিপরীত দিকে। অর্থাৎ বাম দিকে। তাহলে মানেটা কী দাঁড়াল?
শরীরে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই রয়েছে। কিন্তু রয়েছে উলটো দিকে। এমন উলটকায়া মানুষেরই হদিশ মিলেছে সম্প্রতি। উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরের পদরৌনায়। নাম জামালউদ্দিন। বেশ কিছুদিন ধরেই অসহ্য পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তিনি। ব্যথা লাঘব করতে পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন এমনকি পড়শিদের দেওয়া নানা ধরনের টোটকা ‘ট্রাই’ করেছিলেন। কাজে দেয়নি। স্থানীয় চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সফল হননি। ব্যথা কমার বদলে বেড়েই চলেছে দেখে শেষ পর্যন্ত জামালউদ্দিনকে গোরক্ষপুরের একজন বড় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ম মেনে করা হয় এক্স-রে পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসাউন্ড।
এ পর্যন্ত সব কিছু ঠিকই ছিল। বিপত্তি ঘটল এক্স-রে এবং আল্ট্রাসাউন্ডের রিপোর্ট আসার পর। রিপোর্ট ‘চেক’ করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ চিকিৎসকের। এ আবার কী? মানুষটার হৃৎপিণ্ড যে বুকের ডান দিকে ধুকপুক করছে! শুধু কী তাই? আরও চমক রয়েছে লিভার আর গলব্লাডারের অবস্থানে। দু’টোই স্বাভাবিকের বদলে রয়েছে উলটো দিকে। ডান দিকের বদলে রয়েছে বাম দিকে। গোটা ব্যাপারটা খোলসা করে বুঝিয়ে বলছেন ড. শশীকান্ত দীক্ষিত। পেশায় বেরিয়াট্রিক ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন, দীক্ষিত জানাচ্ছেন, “পেটের ব্যথায় কাতর হয়ে আমার কাছে আসেন জামালউদ্দিন। পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওঁর গলব্লাডারে পাথর রয়েছে। কিন্তু অস্ত্রোপচার করে সেই পাথর যে বের করব, সেটা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায় ওঁর শরীরের জন্য। গলব্লাডারটাই যে উলটো দিকে রয়েছে। বাম দিকে। সেই কারণে অন্য উপায়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। আমরা থ্রি ডাইমেনশানাল ল্যাপরোস্কোপিক সার্জারি করে জামালউদ্দিনের গলব্লাডারের পাথর বের করেছি। এখন উনি অনেকটাই সুস্থ।”
দীক্ষিতের কথায়, শরীরের ‘ভুল’ বা ‘বিপরীত’ দিকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবস্থানের বিষয়টি এই প্রথম প্রকাশ্যে এল না। এর আগেও তা ঘটেছে, তবে একবারই। আরও স্পষ্ট করে বললে ১৬৪৩ সালে। দীক্ষিতের যুক্তি, এই ধরনের মানুষের চিকিৎসা করা এমনিতেই বেশ জটিল। তবে তা আরও বেশি জটিল হয়ে ওঠে, যখন অস্ত্রোপচার করতে হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.