দেবশ্রী সিনহা, নয়াদিল্লি: বিজেপিবিরোধী জোট গড়ার লক্ষ্যে এবার সুর নরম করল কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী পদ নিয়ে না ভেবে আপাতত বিজেপিকে হারানোই একমাত্র লক্ষ্য হিসাবে বেছে নিয়েছে তারা। এতদিন নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলে তুলে ধরছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি রাহুলকে জোট গড়তে ছাড়পত্র দেওয়ার পর তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁরা সমঝোতা করতে প্রস্তুত। বিরোধী মহাজোটের নেতাই হবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি মহিলা হলেও আপত্তি নেই। আরএসএস-এর সঙ্গে যোগ না থাকলেই হল। অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মায়াবতীকে মেনে নিতে তাঁর আপত্তি নেই। সেই মহাজোট নির্বাচনের আগে হোক বা পরে। আদতে সেই কর্ণাটক মডেল। যা একক বৃহত্তম দল হওয়া সত্ত্বেও বিজেপিকে মসনদে বসা থেকে আটকাতে পেরেছিল। সেই অঙ্কেই মমতার দেখানো পথে জাতীয় মঞ্চে মহাজোট গড়ার সলতে পাকানো শুরু হল।
[নাবালিকার যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, ঝাঁসিতে চাঞ্চল্য]
গত শুক্রবার অনাস্থা ভোটের দিন নরেন্দ্র মোদি অভিযোগ করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার জন্য রাহুলের তর সইছে না। কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ডের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী পদে কে বসবেন, নির্ভর করছে মহাজোটের কোন দল কত আসনে জয়ী হবে তার উপর। কংগ্রেস অবশ্য ভাল ফল নিয়ে আশাবাদী। সেক্ষেত্রে দল রাহুলকেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চায়। কিন্তু যদি পরিস্থিতি অনুকূল না হয়, বিজেপি-আরএসএসকে রুখতে তারা অন্য পথে যেতেও তৈরি।
অতীতেও কংগ্রেস অন্য দলের নেতানেত্রীকে সমর্থন দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী পদে বসিয়েছে। তা চলতি বছরে কর্ণাটকে কুমারস্বামী হোক বা আটের দশকে রাজীব গান্ধীর জমানায়। সূত্রের মত, মোদির জয়রথ থামাতে বৃহত্তর মহাজোটের কথা ভাবছে কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও তারা তাকিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। হাইকমান্ড জানিয়েছেন, তারা শীঘ্রই কথা বলবেন তৃণমুলনেত্রীর সঙ্গে। কংগ্রেসের মত, তৃণমুলনেত্রী আরএসএস বিরোধী। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে একসময় কংগ্রেসেই ছিলেন, তাও মনে করিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। মমতা অবশ্য আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্যে ৪২টি আসনেই লড়বে তৃণমূল। যেখানে যে দল শক্তিশালী, জোটের স্বার্থে সেখানে সেই দলকে জমি ছাড়তে হবে। অথচ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিরুদ্ধাচরণ করে আসছিল। তাই কংগ্রেস হাই কমান্ডের অবস্থানে তৃণমূলনেত্রীর হাতই শক্ত হল বলে মনে করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, রাহুলের রক্তচাপ বাড়িয়েছেন বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলে অন্যতম শীর্ষ নেতা তেজস্বী যাদবও। তাঁদের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী পদ এবং আসন রফা নিয়ে একটা ঠান্ডা স্নায়ুযুদ্ধের ইঙ্গিত মিলেছে। দলিতনেত্রী মায়াবতী এদিন বলেছেন, আসন রফার সূত্রের উপরেই নির্ভর করছে জোটের ভবিষ্যৎ। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তেজস্বী যাদব বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দৌড়ে রাহুলই বিরোধীদের একমাত্র প্রার্থী নন। সব বিরোধী রাজনৈতিক দল আলোচনা করেই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে বেছে নেবে। সোমবার পাটনায় এক অনুষ্ঠানে তেজস্বী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রবাবু নায়ডু, শরদ পাওয়ার, মায়াবতীর মতো অনেক নেতা বিরোধী শিবিরে রয়েছেন। তাই কোনওভাবেই রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদে একমাত্র প্রার্থী বলা যায় না। যে দল বা দলের নেতা দেশের সংবিধানকে রক্ষা করতে পারবে তঁাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মেনে নেওয়া হবে। পুরো বিরোধী শিবির যাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বেছে নেবে, তাঁকেই আরজেডি সমর্থন করবে।”
চলতি বছরের শেষদিকে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচন। মায়াবতী চান, এই তিন রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়াই করতে। একইভাবে লোকসভায় লড়তে চান বসপা নেত্রী। মায়াবতী দাবি করেছেন, লোকসভা নির্বাচনে বসপা-কে সম্মানজনক আসন দেওয়া হলে তবেই তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যাবেন। কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করতে হলে উত্তরপ্রদেশে মায়ার সঙ্গে জোট গঠন করা ছাড়া কংগ্রেসের সামনে কোনও পথ খোলা নেই। বিষয়টি অনুধাবন করেই জল মেপে পা ফেলতে চাইছেন বসপা নেত্রী।
[কড়া নিরাপত্তায় শুরু পাকিস্তানের ভোটগ্রহণ, মসনদ কি পাবেন ইমরান?]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.