Advertisement
Advertisement

শাসককে আলিঙ্গন বিরোধীর, গণতন্ত্রের নজিরবিহীন মুহূর্ত উপহার রাহুলের

সংসদের এই ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনও বিরোধী নেতা আলিঙ্গন করলেন প্রধানমন্ত্রীকে৷

Published by: Saroj Darbar
  • Posted:July 20, 2018 3:04 pm
  • Updated:July 21, 2018 1:51 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংসদীয় গণতন্ত্র্রের নিজস্ব সৌন্দর্য আছে৷ নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যেও যে স্বাধীনতার হাওয়া খেলে তা শুধু এখানেই সম্ভব৷ স্বৈরতন্ত্রের দমবন্ধ অবস্থা কিংবা সামন্ততন্ত্রের গা-জোয়ারি এখানে নেই৷ শাসক-বিরোধী তাই এখানেও আছে৷ তবে একমাত্র সংসদীয় গণতন্ত্রই তাদের আলিঙ্গনাবদ্ধ হওয়ারও অবকাশ দেয়৷ অনাস্থা নিয়ে আলোচনায় আজ সেই অপূর্ব মুহূর্ত উপহার দিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী৷

সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধীরা৷ সরকারে আস্থা হারিয়েই এই কাজ৷ তা নিয়েই আজ আলোচনা সংসদে৷ প্রত্যাশিতভাবেই বিরোধীদের আক্রমণের নিশানায় থাকবে শাসকদল৷ এদিন সেই মেজাজেই শুরু হল অনাস্থা আলোচনা৷ একের পর অভিযোগ উঠে আসছে শাসকের বিরুদ্ধে৷ উলটো দিকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে শাসকপক্ষের সাংসদরা জানাচ্ছেন এই অনাস্থার কোনও দরকার নেই৷ বেশ কিছুক্ষণ বলতে শুরু করলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ শুরু থেকেই মোদি সরকারের সমালোচনা শুরু করেছিলেন টি-টোয়েন্টির মেজাজেই৷ অ্যাকাউন্টে পনেরো লাখ টাকা থেকে শুরু করে জিএসটি- একের পর এক ইস্যুতে কোণঠাসা করা শুরু হল৷ সংসদে তখন প্রবল হই-হট্টগোল৷ শাসকদলের সাংসদদের চিৎকারে তখন কান পাতা দায়, রাহুলের গলার স্বর প্রায় চাপাই পড়েছে৷ নিঃসন্দেহে বিরোধী নেতা হিসেবে রাহুলের জনপ্রিয়তার প্রমাণ মেলে এতে৷

Advertisement

মমতার দল করেন? কাকলির বাড়িতে হানা দিয়ে প্রশ্ন পুলিশের ]

তবে একেবারে শেষ লগ্নে নিজের বক্তৃতাকে রীতিমতো স্যুরিয়েল করে তুললেন রাহুল৷ এই রাহুল যেন শুধু বিরোধী নেতা নন, বরং আর পাঁচজন ভারতবাসী হিসেবেই হাজির হয়েছেন মোদির কাছে৷ সেখানে কোনও বিরোধিতা নেই৷ বিদ্বেষ নেই৷ বললেন, “আপনার যে আমাকে দেখতে পারেন না তা জানি৷ অনেকেই অনেক গালিগালাজ দেন৷ পাপ্পু বলে ডাকেন৷ কিন্তু আপনাদের জন্যে আমার মনে কোনও বিদ্বেষ নেই৷ বরং যে যত গালিগালাজ দেন, তাকে আরও ভালবাসাই আমার আদর্শ৷” বললেন, সত্যিকার হিন্দু হওয়ার যে কী অর্থ তা মোদিই তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ বক্তৃতা শেষ করেই তাই উঠে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে৷ আলিঙ্গন করলেন তাঁকে৷ শাসকদলের সাংসদরাও তখন হতচকিত৷ খোদ প্রধানমন্ত্রীও চমকে উঠেছেন৷ কিন্তু এটাই রাহুলের মাস্টারস্ট্রোক৷ লোকসভার ইতিহাসে এ দৃশ্য নজিরবিহীন৷ এই প্রথমবার এরকম এক মুহূর্তের সাক্ষী থাকল সংসদের ইতিহাস৷

কেন এমন করলেন রাহুল? রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজ রাহুল শুধু মোদিকেই নয়, গোটা দেশকেই সহিষ্ণুতা, সহনশীলতার শিক্ষা দিয়ে গেলেন৷ এই মোদি সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কম আক্রমণ করেনি৷ এমনকী তাঁর মায়ের বিদেশে জন্ম প্রসঙ্গ তুলেও সমালোচনা হয়েছে৷ প্রতিদিন বিজেপির কোনও না কোনও নেতা তাঁকে পাপ্পু বলে ডাকে৷ কিন্তু এদিন রাহুল বুঝিয়ে দিলেন, এই বিদ্বেষ, এই বিভাজন-বিভেদ, এই ব্যক্তি আক্রমণ কিংবা কুৎসা সনাতন ভারতের পরিচয় নয়৷ ভারতীয় রাজনীতিরও নমুনা নয়৷ ভারতের রাজনীতিতে বিরোধিতা অবশ্যই থাকে৷ তিনিও আজ সে ধর্ম পালন করেছেন৷ নানা ইস্যুতে শাসককে আক্রমণ তিনিও করেছেন৷ কিন্তু শেষ বিচারে মানুষকে এগিয়ে দেয় এই সহিষ্ণুতা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার প্রবণতা৷ সংসদীয় গণতন্ত্র মানে শুধু বিরোধিতা আর সংখ্যাগরিষ্ঠতার অহংকারের রাজনীতি নয়৷ বরং তা সহবতের, সহমতের পরিসরও দেয়৷ তার জন্য বদল প্রয়োজন মানসিকতায়৷ যার অভাব মোদি শিবিরে৷ এদিন রাহুলের আলিঙ্গন যেন গোটা গেরুয়া শিবিরকেই এই সহবতের শিক্ষা দিয়ে গেল অপূর্ব আলিঙ্গনে৷         

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement