অভিরূপ দাস: একহাতে বাইক চালিয়েই জুটল ট্রাফিক গার্ডের পিঠ চাপড়ানি। ‘ডেঞ্জারাস ড্রাইভিং’-এর ধারায় চার্জ তো নয়ই, সার্জেন্ট বরং বললেন, “খুব ভাল। সাবধানে চালাবেন!”
গল্প হলেও সত্যি। এই সেদিনের কথা। পার্ক স্ট্রিট মোড়ে সাউথ ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্টরা রেড করছিলেন। হেলমেট ছাড়া বাইক চালালে, অথবা গতির ঊর্ধ্বসীমা না মানলে ধরপাকড় চলছিল। এমন সময় মোটর সাইকেল করে আসছিলেন সমীরণ। একহাতে মোটর সাইকেল চালাচ্ছেন বছর ত্রিশের যুবক। তা দেখেই দূর থেকে মুচকি হাসেন সার্জেন্ট অসীম বারি। “এত বড় দুঃসাহস। প্রথমটায় চমকেই যাই। সবাই যেখানে রেড হচ্ছে বুঝতে পেরে ইউটার্ন নিয়ে পালাচ্ছিল। ছেলেটি চুপচাপ এদিকেই আসছিল।” তাঁকে পাকড়াও করে লজ্জায় পড়ে যান সার্জেন্ট নিজেই! “দেখি কব্জির তলা থেকে ওর একটা হাতই নেই।”
এরপরই সোশ্যাল সাইটে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ছবি। হার না মানার এই মানসিকতাকে স্যালুট জানিয়েছেন লক্ষ লক্ষ নেটিজেন। যাতে খানিকটা লজ্জিত সমীরণ। জন্ম থেকেই কব্জির তলা থেকে পাঞ্জাটা নেই। ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন না। কিন্তু, তাতেও হার মানেননি তিনি। একহাতেই মোটর সাইকেল চালিয়ে রোজগার করেন। একটি বেসরকারি কোম্পানির হয়ে বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেন চিংড়িঘাটার এই যুবক। আশপাশ থেকে যখন সাঁ সাঁ করে গাড়ি বেরিয়ে যায়, এক হাতে বাইক চালাতে ভয় লাগে না? একগাল হেসে তরতাজা সমীরণ বলেন, “ভয় তো লাগেই। তবু বাঁচতে তো হবে। রোজগার না করলে খাব কী। একহাতে তাই খুব বেশি গতিতে বাইক চালাই না।”
সাধারণত একহাতে বাইক চালালে ট্রাফিক আইন অনুযায়ী তা ডেঞ্জারাস ড্রাইভিংয়ের ধারায় পড়ে। তাতে মোটা টাকা জরিমানাও হয়। সমীরণের এহেন কাজে বকাঝকা তো দূরের কথা, তাঁকে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়েছেন সার্জেন্ট অসীম বারি। জানিয়েছেন, “ওঁর এই জীবনধারণকে আমি কুর্নিশ করি। মোটর ভেহিক্যালস অ্যাক্টের কোনও ধারা নেই যেখানে আমি ওকে শাস্তি দিতে পারি। জীবনযুদ্ধে প্রত্যয়ী এক যুবক। ও আরও এগিয়ে চলুক।”
মা সন্ধ্যা মণ্ডল, বাবা গোপাল মণ্ডল ছাড়াও বাড়িতে রয়েছেন দুই ভাই। এর আগে একটি কলসেন্টারে চাকরি করতেন সমীরণ। কিন্তু, এক হাতে কম্পিউটার চালানোর গতি কম থাকায় সেই চাকরি তাঁকে ছাড়তে হয়। তারপর এ অফিস সে অফিস ঘুরে এখন বাড়িতে বাড়িতে রেস্তরাঁর খাবার ডেলিভারি করেন। অনেক সময়েই এক হাতে বাইক চালানোর জন্য সামান্য দেরি হয়ে যায়। কিন্তু, তাতে রাগ করেন না ক্রেতারা। বরং বলেন, “তুমি এগিয়ে যাও সমীরণ। আমরা আছি তোমার পাশে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.