অভিরূপ দাস: পেটে সাংঘাতিক ব্যথা। যন্ত্রণার উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, নাটের গুরু একটি বলপেন। যার খোঁচায় ক্ষুদ্রান্ত্র বেবাক ফুটো। শিবরাম চক্কোত্তি হলে হয়তো বলতেন, রীতিমতো ‘পেনান্তকর’ ঘটনা! হুগলির বাসিন্দা একুশ বছরের ওই তরুণী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সে জন্য ওষুধও খেতেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ক’দিন ধরেই একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছিল। কারণটা বোঝা যাচ্ছিল না।
আচমকা একদিন রাত থেকে শুরু হয় ভয়ংকর যন্ত্রণা। ছটফট করছিলেন। খেতে পারছিলেন না। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রেফার করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালের (SSKM) গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগে। সেখানে এন্ডোস্কোপি করে দেখা যায় লম্বা শঙ্কু আকৃতির বস্তু আটকে আছে ক্ষুদ্রান্ত্রে। সন্দেহ হয় চিকিৎসকদের। অবশেষে স্বীকার করে মেয়েটি। ‘‘একটা পেন খেয়েছিলাম চারদিন আগে।’’
সেটাই আটকে আছে ডিওডোনামে। ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম এবং ক্ষুদ্রতম অংশ এই ডিওডেনাম। ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা এই নালির সঙ্গে পিত্তনালি ও অগ্ন্যাশয় নালি যুক্ত থাকে। দ্রুত তরুণীকে নিয়ে আসা হয় সার্জারি বিভাগে। এসএসকেএমে চিকিৎসকদের টিম বুঝে যান দেরি করা ঠিক হবে না। দ্রুত প্রয়োজন অস্ত্রোপচারের। কারণ গিলে ফেলা পেনটা ডিওডেনামকে ফুটো করে দিয়েছিল। ক্ষুদ্রান্ত্র ফুটো হয়ে হুড়মুড় করে বেরোতে শুরু করেছিল খাবার।
স্বাভাবিকভাবেই মারাত্মক যন্ত্রণা। টানা দু’ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে অবশেষে ফুটো ক্ষুদ্রান্ত্র সেলাই করা হয়েছে। বের করা হয়েছে পেনটা। তরুণী যাতে আপাতত খাওয়া দাওয়া করতে পারে তার জন্য করা হয়েছে ফিডিং জেজুনোস্টমি। চিকিৎসকদের টিমে ছিলেন ডা. রনিত রায়, ডা. শ্রীজা বসু, ডা. স্নেহল তিওয়ারি, ডা. ইরফানা। এহেন অস্ত্রোপচারে অ্যানাস্থেটিস্টের ভূমিকা অপরিসীম। সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচারে অ্যানাস্থেটিস্টের দায়িত্বে ছিলেন ডা. সম্পদ বিশ্বাস। সার্জন ডা. রনিত রায়ের কথায়, মেয়েটি মানসিক অবসাদগ্রস্ত। প্রথমদিকে মেয়েটি বিষয়টি না বলায় বোঝা যাচ্ছিল না। পেনটির নিব ফুটো করে দিয়েছিল ক্ষুদ্রান্ত্রের দেওয়ালের অংশ।
গ্যাস্ট্রো বিভাগে পেনটি বের করা সম্ভব ছিল না। সার্জারি বিভাগে এক্সপোলারটি ল্যাপারোটমিতে ধরা পরে পুরো বিষয়টি। ক্ষুদ্রান্ত্র অত্যন্ত পাতলা। ডা. নিশান্তদেব ঘটকের কথায়, আলসারের কারণেও এই ক্ষুদ্রান্ত্র অনেক সময় ফুটো যায়। একে বলা হয় ডিওডেনাল পারফোরেশন। ক্ষুদ্রান্ত্র ফুটো হয়ে গেলে খাবারগুলো ছড়িয়ে পেটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। ঢুকে পড়বে ক্যাভিটিতে। তা থেকে শুরু হয় মারাত্মক যন্ত্রণা। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলে ইন্সটিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি বিভাগে তরুণীর কাউন্সেলিং করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.