সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির লড়াই নয়। ২০১৯-এর লড়াই সমষ্টির বিরুদ্ধে সমষ্টির। মিথ্যের বিরুদ্ধে সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। শনিবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তৃণমূলের মহাসমাবেশ থেকে এভাবেই বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের সুর তুললেন একদা মোদি শিবিরের ঘনিষ্ঠ দুই সেনাপতি। আর প্রাক্তন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা এবং অরুণ শৌরির এধরনের বক্তব্য বিরোধী শিবিরকে আরও চাঙ্গা করে তুলল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
মোদি জমানায় আদর্শগত মতান্তরের জেরে গেরুয়া শিবির থেকে দূরত্ব বজায় রাখা তিন ব্যক্তি – অরুণ শৌরি, যশবন্ত সিনহা এবং শত্রুঘ্ন সিনহা বরাবরই জাতীয় রাজনীতির বিশেষ নজরে। তৃণমূল সুপ্রিমো তথা এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় দিল্লি সফরকালে একাধিকবার এই তিনজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁদের বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে শামিল করার চেষ্টা করেছেন। সেই চেষ্টা সফল হতে চলেছে, সেই ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। উনিশের ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন শৌরি, যশবন্ত সিনহারা। আর শনিবার, ব্রিগেড মঞ্চের সারিতে ত্রিমূর্তিকে দেখে বোঝা গেল, তাঁরা মোদি বিরোধী শিবিরের সঙ্গেই রয়েছেন।
[যত্রতত্র মূত্রত্যাগ, মমতার স্বপ্নের শহরকে দূষিত করছেন তাঁরই অনুগামীরা]
এদিন বেলা ১২টার কিছু আগে ব্রিগেডের মঞ্চে অতিথিদের বক্তব্য রাখার জন্য ডেকে নেন সভার মূল উদ্যোক্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যশবন্ত সিনহা ভাষণ দিতে উঠে রীতিমতো মোদিকে ঠুকলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘এই মিছিল দেখে ওরা বলবে, একজনকে সরানোর জন্য এত লোক কেন? আমি বলতে চাই, এটা কোনও ব্যক্তি কেন্দ্রিক লড়াই নয়। এই লড়াই একটি বিচারধারার। আর আমরা মোদির বিচারধারার বিরুদ্ধে লড়ছি। আজ দেশে এমন কোনও সাংবিধানিক সংস্থা নেই, যাকে ইনি শেষ করার পথে নিয়ে যাননি। তাই দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য আমরা একত্রিত হয়েছি। সরকারের বিরোধিতা করলেই দেশদ্রোহী বলে দেওয়া হচ্ছে। জীবনের উদ্দেশ্য একটাই, মোদিকে সরকার থেকে সরানোর।’
আরেক প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা অরুণ শৌরি বলেন, ‘এত বড় মিথ্যের সরকার আগে হয়নি। সিবিআই, আরবিআইয়ের মতো সব স্বশাসিত সংস্থাকে নিজের কবজায় আনতে বদ্ধপরিকর। এত কেলেঙ্কারি আগে হয়নি। নোটবাতিলের মতো সর্বনাশা সিদ্ধান্ত এর আগে কেউ নেয়নি। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থানে যেমন ক্ষমতাচ্যূত হয়েছে, তেমনই এবারের ভোটেও এদের ভাগিয়ে দিতে হবে। এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়ান ইজ টু ওয়ান ফর্মুলাকে গ্রহণ করে অরুণ শৌরির আরও পরামর্শ, ‘বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে একজনই বিরোধী প্রার্থীর লড়াই করা উচিৎ। মোদি-শাহর জুটির উপর থেকে সকলের বিশ্বাস উঠে গিয়েছে। সবাইকে এককাট্টা হয়ে লড়াই করতে হবে। আর বিজেপি বিরোধীদের এই একজোট করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়, যথাযথ। সবার কাছে যেতে হবে, সবাইকে বোঝাতে হবে যে আমরা এক আছি, এক থাকব।’
[বিজেপি বিরোধী ভোট বিভাজন রুখতে হবে, মমতার মঞ্চে বার্তা কংগ্রেস নেতার]
আজকের ব্রিগেড সমাবেশ থেকে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া বা ঐক্যবদ্ধ ভারতের বার্তা দিতে চায় তৃণমূল। এত বড় মঞ্চে বিজেপি বিরোধী সবকটি দলের অন্তত একজন করে প্রতিনিধিকে একত্রিত করে সেই কাজে সাফল্যের লক্ষ্যে এগোচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তবে এর মধ্যে অরুণ শৌরি, যশবন্ত সিনহা, শত্রুঘ্ন সিনহাদের সমাবেশে যোগ দিয়ে সরকার বিরোধী বার্তা নিঃসন্দেহে লড়াইয়ে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে। এমনই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.