সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বাধীনতা আর শালীনতা। দুটো আলাদা শব্দ। এর মানেও আলাদা। যদি কেউ মনে করে স্বাধীনতার মোড়কে শালীনতা ভাঙা যায়, তাহলে তা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তাও যদি সমাজের উঠতি সো-কলড আধুনিক উগ্রবাদীরা এমন কাজ করে, মানা যায়। কিন্তু যাঁরা শালীনতার পাঠ পড়ান, স্বাধীনতার মানে বোঝান, তাঁরা যদি এই সূক্ষ্ম তফাৎ না বোঝেন, তাহলে?
সম্প্রতি আলিপুরদুয়ারের একটি স্কুল খবর জায়গা করে নিয়েছে শিরোনামে। স্কুলটি কুমারগ্রামে ব্লকের বারবিশা বালিকা বিদ্যালয়। পড়াশোনা বা সামাজিক কোনও কাজের জন্য নয়। ‘বদতমিজ দিল’-এর জন্য। স্কুলের কোনও এক অনুষ্ঠানে শিক্ষিকাদের এই গানের তালে নাচতে দেখে গিয়েছে। তাও শুধু হাত পা নাড়িয়ে নয়; রীতিমতো কোমর দুলিয়ে পাক্কা রণবীরের স্টেপ নকল করে। তবে তার মধ্যে কোনও অশালীন ব্যাপার দেখেননি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। তিনি তো সাফাই দিয়েই দিয়েছেন। বলেছেন, “স্কুলের সুনাম নষ্ট করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গানের দৃশ্যের ভিডিও বিকৃতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”
[ বকেয়া টাকা নিতে বাড়িতে, চিমনি সংস্থার কর্মীকে বিষাক্ত পানীয় দিল বধূ ]
দোষ সরাসরি বর্তেছে মিডিয়ার উপর। সংবাদমাধ্যমের অবশ্য এনিয়ে একটা বদনাম আছে। তারা নাকি যে কোনও ঘটনাকে বড্ড বেশি নেতিবাচক করে দেখায়। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সাফাই দিলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ যে ঘটনায় বেশ অস্বস্তিতে, তা জানানো হয়েছিল সংবাদমাধ্যমেই। এও বলা হয়েছিল, অনেকে এই ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। আর তারপর থেকেই সোশাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছিল ট্রোল। ‘তারা শিক্ষিকা বলে কি এইটুকু স্বাধীনতা নেই’ গোছের অনেক কথা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার সেই স্কুল কর্তৃপক্ষ ও বেশ কিছু অভিভাবকদের কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল ‘শঙ্খিনী’-র স্রষ্টার কলমে।
সম্প্রতি এই ঘটনা সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের ভিডিওটি শেয়ার করেছেন সাহিত্যিক সংগীতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, “স্কুলে টিচাররা হিন্দি গানের সঙ্গে নাচছেন। ছাত্রীরাও নাচছে। টিচাররাও নাচছেন। আমার এতে কোন আপত্তি নেই। নাচুন। যত খুশি নাচুন। কিন্তু স্কুল হল ডিসিপ্লিনের জায়গা। এখানে সব কিছু পরে, আগে ডিসিপ্লিন। এই যে টিচাররা এখানে নাচছেন এটা বিশৃঙ্খল নাচ। টিচাররা আর যাই করুন স্কুলের মধ্যে এহেন বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারেন না। ওনাদের উচিত ছিল “বদতামিজ্, বদতামিজ” গান শুরু হওয়ার আগে সুন্দর করে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে হাত মেপে পরস্পরের সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্ব রচনা করে নিজের নিজের অবস্থান তৈরি করে নাচটা নাচা। এবং হাত পা কোমর ও বাকি অঙ্গ সঞ্চালনের একটা কোঅর্ডিনেশন থাকা দরকার ছিল। এই বিশৃঙ্খল নাচ কোনোমতে বরদাস্ত করা যায় না। টিচারদের এই বিশৃঙ্খল নৃত্য দেখে আমারই মাথাটা কেমন করছে। আর এই টিচাররা অনেক নাচ ভেতরে চেপে রেখেছেন। ওনাদের একবার কলকাতায় আনা হোক। তন্ত্রায় হোল নাইট পার্টি করার সুযোগ দেওয়া হোক। একবার ৮/৯ ঘন্টা টানা নেচে নিলে এই অবদমিত নাচার ইচ্ছেতে একটু শান্তির জল পড়বে।”
তাঁর কথার যে সমর্থনের অভাব নেই, তা তাঁর পোস্টের কমেন্ট দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে শিক্ষিকাদের কোমর দুলিয়ে নৃত্য পছন্দ করেনি অনেকেই। আর তার একটাই কারণ, যাঁদের হাতে রয়েছে শিক্ষাদানের মতো মহৎ একটি কাজ, তাঁরা এভাবে ডিসিপ্লিন ভাঙছেন কী করে? আর এখানেই উঠছে সেই স্বাধীনতা আর শালীনতার পার্থক্যের প্রশ্ন। উঠছে শৃঙ্খলার প্রশ্ন। স্কুলে কি এমন কাণ্ড আদতেও সমর্থনযোগ্য? নাকি স্বাধীনতার জন্য অনুশাসনকে জলাঞ্জলি দেওয়াই দস্তুর হয়ে দাঁড়াচ্ছে? সংগীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলম ফের তুলে দিল সেই প্রশ্ন।
[ গলায় ট্যাবলেট আটকে শিশুর মৃত্যু, হাওড়া জেলা হাসপাতালে তুলকালাম ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.