অভিরূপ দাস: আশীর্বাদ করুন। নবদম্পতি যেন সুখি হয়। টিকার (COVID Vaccine) ট্রায়াল যেন সফল হয়। মনগড়া কথা নয়। এমনই অভিনব বিয়ের কার্ড ছাপিয়েছেন কল্যাণ আর পূজিতা।
দোরগোড়ায় বিয়ে। ১৮ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক মালাবদল। তার আগেই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দম্পতি। করোনার রুশ টিকা ‘স্পুটনিক ফাইভে’র (Sputnik V) ট্রায়ালে অংশ নিচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার রাজপুরে সোনারপুরের পাত্র, ও তাঁর হবু স্ত্রী। দক্ষিণ শহরতলির এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁদের হাতে ফুটবে সুচ।
নাম লিখিয়েছেন দু’জনই। মাইক্রোবায়োলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কল্যাণের কথায়, “খাতায় কলমে আমি ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কার। বেসরকারি ওই হাসপাতাল থেকে একটি ফোন পাই। স্পুটনিক ফাইভের ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার জন্য। দ্বিতীয়বার ভাবিনি।” মাঝে শুধু কাজ ছিল হবু স্ত্রীকে রাজি করানো। তাঁর বাড়িতে বলতে তাঁরাও এককথায় সায় দিয়েছেন। দু’জনেই টিকা নেবেন বিয়ের আগে। ভয় করছে না? কল্যাণের কথায়, “ভয় কিসের? করোনা অত্যন্ত ছোঁয়াচে। কিছু ক্ষেত্রে মারণও বটে। টিকা নেওয়া তো বিচক্ষণতার লক্ষণ। না নিলেই বরং ভয় পেতাম।” আর সকলে যখন বিয়ে করে মধুচন্দ্রিমার পরিকল্পনা করেন এই দম্পতি ভাবছেন টিকা নেওয়ার পর আগামী একমাস কী কী সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
লকডাউন আবহে বন্ধ ছিল সামাজিক মেলামেশা। বিয়ে, অন্নপ্রাশনের মতো অনুষ্ঠানেও তালা ঝুলেছিল। আনলক পর্বে সে সব শুরু হলেও অনেকেই মেলামেশা করতে ভয় পাচ্ছেন। কল্যাণের কথায়, “আমাদের আমন্ত্রিত অতিথিরা ভরসা পাবেন। যাঁদের বিয়েতে এসেছেন তাঁরা করোনার টিকা নিয়েছেন জেনে।” দু’জন মিলে যত বাড়িতে নেমন্তন্ন করতে যাচ্ছেন সেখানে সকলকেই বলছেন, “ভয় পাবেন না। টিকা নিন। আমরাও নিচ্ছি।”
বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া টেস্ট করিয়ে নেওয়া বাধ্যতামূলক। যদিও অনেকেই তা করেন না। চিকিৎসকরা বলেন, বিয়ের আগে সচেতন হলেই থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি আরেক বাহককে বিয়ে করেন, তাহলে তাদের প্রতিটি সন্তানের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ২৫ শতাংশ। সেইমতো থ্যালাসেমিয়া টেস্টও করিয়েছেন কল্যাণ এবং তাঁর হবু স্ত্রী। করোনায় মারাত্মক ছোঁয়াচে। ড্রপলেটের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পরে মুহূর্তে। করোনা টেস্ট করার আগেও তাই দু’বার ভাবেননি কল্যাণ।
করোনার রুশ টিকা ‘স্পুটনিক ফাইভে’র তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের ছাড়পত্র মিলেছে। এথিক্স কমিটির বৈঠকের পরে ওই টিকা নিয়ে গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে ছাড়পত্র পেয়েছে পিয়ারলেস হাসপাতাল। রাজ্যে ভ্যাকসিন গবেষণার সংযোগকারী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক প্রধান স্নেহেন্দু কোনার জানিয়েছেন, ‘‘রুশ টিকার ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিতে চেয়ে ইতিমধ্যেই ৪৬৮ জন আবেদন করেছেন। এই ৪৬৮ জনের মধ্যেই দু’জন কল্যাণ এবং তাঁর স্ত্রী।” ১৮ জানুয়ারির সন্ধ্যায় পুরোহিত বলবে, “যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব।” কল্যাণ বলছেন, দুই হৃদয় এক হবে করোনার টিকা নিয়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.