ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অসমে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম। রাষ্ট্রের কাছে তাঁরা আপাতত ‘বিদেশি’। সীমান্ত রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বিতাড়িত করার এই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ১২ লক্ষ মানুই হিন্দু। অসমের পরিস্থিতি দেখে এরাজ্যের সীমান্তের জেলাগুলিও কাঁপতে শুরু করেছে। এনআরসি হলে শুধুমাত্র বাদ পড়ার আশঙ্কাতেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন বেশ কয়েকজন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের তরফে সচেতনতা প্রচার করা হচ্ছে এই মর্মে, অযথা এনআরসি আতঙ্কে ভুগবেন না। এবার সেই বার্তাই সামনে নিয়ে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এনেতাজি ইন্ডোরের দলের শ্রমিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনিও বললেন, ‘বাংলায় এনআরসি হবে না। বাংলা কেন, আর কোথাও হবে না। অযথা আতঙ্কে ভুগবেন না। এখানেও এনআরসি-র ভয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’ এ প্রসঙ্গে তিনি সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করলেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ কর্মক্ষেত্রগুলিতে জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে আজ নেতাজি ইন্ডোরে শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র তরফে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানেই মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে কেন্দ্রের উপর চাপ তৈরির কর্মসূচি ঠিক করে দেন। ২৬, ২৭ তারিখ কোল ইন্ডিয়ার সামনে বিক্ষোভ জমায়েত করার জন্য সংসদীয় দলএনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দেন। শহর কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিলের পাশাপাশি দিল্লিতেও কীভাবে সরব হবে তৃণমূল নেতৃত্ব, তাও ঠিক করে দেন। তারপরই কেন্দ্রে শাসনাধীন বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে গিয়েই তিনি নাগরিকপঞ্জির প্রসঙ্গ তোলেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভাল করে শুনুন, রেশন কার্ড সংশোধন, ভোটার তালিকায় নাম তোলা এবং নাম সংশোধন ইত্যাদির জন্য শিবির শুরু করা হয়েছে। তাতে গিয়ে নাম তুলুন। এটা আপনার ভোটাধিকারের বিষয়। অন্য কিছু নয়। অযথা চিন্তা করবেন না। আমি তো বলছি, এখানে এনআরসি হবে না। আমার কথায় ভরসা রাখুন। কে করবে এখানে এনআরসি? করতে হলে রাজ্যের সাহায্য প্রয়োজন। আমি এখানে তা হতে দেব না। কিছু রাজনৈতিক অপপ্রচারে পা দেবেন না। কে বলেছে ১৯৭১ সালের নথি প্রয়োজন? কীভাবে নথি দেবেন? এসবের কোনও প্রয়োজন নেই। বিজেপির হুঁশিয়ারিতে কান দিয়ে নিজেদের জীবন নষ্ট করবেন না।’ তিনি আরও বলেন, ”যদি ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়, এলাকার জনপ্রতিনিধিকে সাহায্য করতে বলুন। সেখানেও যদি সাহায্য না পান, তাহলে ‘দিদিকে বলো’র মাধ্যমে আমাকে বলুন। আমি গিয়ে দেখব কে করেনি।’
এনআরসি আতঙ্ক যেভাবে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ভূমিকারও এদিন তীব্র সমালোচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির কথায় প্ররোচিত হয়ে, কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম টিআরপি বাড়ানোর জন্য অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে। যা সমাজের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর।’ তবে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর গলায় এনআরসি নিয়ে সচেতনতা বার্তা পেয়ে সীমান্ত জেলার মানুষজন কিছুটা নিশ্চিন্ত হতে পারবেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.