ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য : সস্তায় স্কুলের পোশাক তৈরি করে দেশে নজির গড়েছে রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী।চলতি বছরের শেষ পর্যায়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি ২৩৫.৭২ কোটি টাকার পোশাক তৈরি করেছে। সেইসব পোশাকই কিনেছে স্কুলশিক্ষা দফতর। তথ্য বলছে, কলকাতা-সহ রাজ্যের ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৮ জন পড়ুয়া রোজ এই পোশাক পরেই স্কুলে যায়। নিখরচায় সেই পোশাক দেওয়া হয় স্কুল পড়ুয়াদের। আগামী আর্থিক বছরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকেই রাজ্যের প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সব পড়ুয়ার স্কুলের পোশাক তৈরির বরাত দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পঞ্চায়েত দফতর। এনিয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু হয়েছে।
পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য আট বছর ধরে চলছে ‘আনন্দধারা’ প্রকল্প। মূল উদ্দেশ্য, গ্রাম-শহরের মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। গত কয়েক বছর ধরে ছাগল, মুরগি পালন, এমনকী অজৈব সার কৃষিকাজেও যুক্ত করা হয়েছে গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠী। জেলার সরকারি দফতরগুলিতেও ছোট কাউন্টার তৈরি করে সেগুলি বিক্রিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে চলতি আর্থিক বছরের শুরুতেই স্কুলের পোশাক তৈরির জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের যুক্ত করা হয়।
পঞ্চায়েতের তথ্য বলছে, স্ব্নির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে প্রথমে একটি সংঘ তৈরি হয়। রাজ্যে এখন ৩,৩০০টি সংঘ রয়েছে। সমবায় সমিতির আইন অনুযায়ী সেগুলি রেজিস্ট্রি করা হয়। একেকটি সংঘে অন্তত তিন হাজার মহিলা সদস্য রয়েছেন। এঁদেরই সরকারি স্কুলগুলির পোশাক তৈরির কাজে যুক্ত করা হয়েছে। পঞ্চায়েত দফতরের এক শীর্ষকর্তার কথায়, জেলার স্কুল শিক্ষা অধিকর্তা গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন।
কীভাবে এই কাজ হয়? আনন্দধারা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত পঞ্চায়েতের আধিকারিকদের বক্তব্য, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই স্কুলগুলির কাছে জানতে চাওয়া হয়, কতজন পড়ুয়ার পোশাক দরকার। সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষক জেলা পঞ্চায়েতের কাছে সেই বরাত পাঠান। সেই বরাত পাঠিয়ে দেওয়া হয় আনন্দধারার সংঘগুলিতে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্কুলগুলির চাহিদা অনুযায়ী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা পোশাক তৈরি করে পাঠিয়ে দেন। দোকান থেকে দামও কম। টেকসই এই পোশাক পেতে বছরভর বরাত দেওয়া হচ্ছে।
পঞ্চায়েতের এক শীর্ষকর্তার কথায়, বর্তমানে রাজ্যের ৮০ লক্ষ মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আনন্দধারার বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। পরিবারের আর্থিক উন্নতির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। ওই আধিকারিকের কথায়, আগামী অর্থবর্ষে রাজ্যের সব সরকারি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের পোশাক স্ব্নির্ভর গোষ্ঠী থেকে নেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.