ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: দৃশ্যটা কল্পনা করুন। ভিড়ে ঠাসা পিজি হাসপাতালের আউটডোরের সার্জারির বাইরে এক ভদ্রমহিলা অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ভিতর থেকে চিকিৎসক উঠে এলেন। রোগিণীকে ভিতরে নিয়ে এলেন। কী হয়েছে? বলতেই বাঁ হাতটা তুলে ধরলেন। এ কী? কাঁধ থেকে হাতের কবজি পর্যন্ত পাউরুটির মতো ফোলা। পুঁজ ভর্তি। ‘‘এমনটা কী করে হল?’’
পরেরটুকু যে কোনও ‘হরর থ্রিলার’কেও হার মানায়। হাতের কব্জি থেকে কাঁধ, এমনকী শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুঁচ ফুটিয়ে রেখেছেন তিনি। এটাই ওঁর অভ্যাস! এর ফলেই বাঁহাতে পুঁজ হয়ে ফুলে গেছে। ডা. রণিত রায় এবার তাঁর দুই সহকর্মী ডা. শ্রীজা বসু এবং ডা. রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে নিলেন। ত্রয়ী চিকিৎসক ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন। জানা গেল, মুর্শিদাবাদ থেকে এসেছেন তিনি। ফের পরের দিন আসতে বলা হল। যথারীতি স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে ওই গৃহবধূ পিজির সার্জারিতে হাজির হলেন। এবার এই তিন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগ দিলেন ডা. অধ্যাপক দীপ্তেন্দ্র সরকার। যা শুনলেন তার পরতে পরতে নিজের শরীরকে আঘাত করার কাহিনি। রোজ অন্তত দুই থেকে তিনটি করে আলপিন বা ছুঁচ হাত-পা অথবা শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুটিয়ে দেন তিনি। কিন্তু এমনভাবে ছুঁচ ফোটান যে সবকটি চামড়ার তলায়! একটিও কিন্তু শিরায় আঘাত করেনি। স্বাভাবিকভাবেই রক্তপাতও হয়নি! সেগুলি ফুলে সংক্রমণ ঘটিয়েছে।
এমনটা হয় নাকি? তিন চিকিৎসক প্রশ্ন করেছিলেন তাঁদের মাস্টারমশাই দীপ্তেন্দ্র সরকারকে? উত্তরে দীপ্তেন্দ্রবাবু বলেছিলেন,‘‘না হলে সুদূর মুর্শিদাবাদ থেকে খুঁজে খুঁজে এসএসকেএমের সার্জারির আউটডোরে এলেন কী করে? হয়তো এভাবেই উনি কারও উপর রাগ বা অভিমানের জ্বালা মেটাতে চান। পরে জানা গিয়েছিল, সংসারে অশান্তি। তার থেকেই মনোবিকার। যার পরিণতি শরীরে ছুঁচ ফোটানো। অনেক সাধ্যসাধনা করে কাউন্সেলিং করে বাঁ হাতে চ্যানেল করে গৃহবধূর শরীরে জমে থাকা পুঁজ-রক্ত পরিষ্কার করে অ্যান্টিবায়োটিক ও মলম দেওয়া হয়। ঠিক হয় শরীরের অন্যান্য অংশে যেসব ছুঁচ রয়েছে সেগুলি অস্ত্রোপচার করে বের করতে হবে। ব্যস! ওই পর্যন্ত।
ডা. রণিত রায়ের কথায়,‘‘আচ্ছা আসছি বলে সেই যে চলে গেলেন, আর আসেননি। কেন আসেননি তাও জানা যায়নি। এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনেকবার চেষ্টা করেছে রোগিণীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। যে মোবাইল নম্বরটি দেওয়া হয়েছিল তা কাজ করছে না।’’ বললেন ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার। আর রণিতের আশঙ্কা, আসলে ছুঁচগুলি থেকে ফের সেপটিক হতে পারে। এমনকী প্রাণঘাতী আকার নিতে পারে। তাই একবার যদি আসতেন, অস্ত্রোপচার করে সব ছুঁচ বের করা যেত। আক্ষেপ চিকিৎসকদের। ছ’মাস ধরে সার্জারির চিকিৎসকরা রোগিণীর অপেক্ষায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.