অর্ণব আইচ: রাজমিস্ত্রি ও ক্যাটারিংয়ের কাজের আড়ালে মোবাইল চুরির অভিযোগ। সুযোগ পেলেই মন্দির ও মেলায় গিয়ে ভিড়ের মধ্যে মিশে নিপুণ হাতে মোবাইল তুলে নেয় মধ্যবয়সী মহিলা ও তার সঙ্গীরা। মধ্য কলকাতা থেকে লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ল মোবাইল চুরি গ্যাংয়ের মহিলা ‘মাথা’।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত মহিলার নাম ভারতী দাস। তার বাড়ি হুগলি জেলায়। খুব সাধারণ চেহারার ওই মহিলাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, সে মোবাইল চুরি গ্যাংয়ের এক ‘পান্ডা’। সম্প্রতি মধ্য কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলের একটি মন্দিরের কাছে এক পুণ্যার্থীর মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। বড়বাজার এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ ধরে তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দারা এক মধ্যবয়সী মহিলাকে শনাক্ত করেন। মহিলার ছবি নিয়ে চলতে থাকে তার সন্ধান।
কিছুদিন আগে শিয়ালদহের কাছে একটি মোবাইল চোরের গ্রুপকে চিহ্নিত করেন গোয়েন্দা আধিকারিকরা। তাদের পিছু নিয়েই একটি মন্দিরের কাছে সন্ধান মেলে অভিযুক্ত ভারতী দাসের। লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, ওই মহিলা জেরার মুখে জানিয়েছে যে, তার স্বামী রাজমিস্ত্রি। সে নিজেও কখনও রাজমিস্ত্রি বা কখনও কখনও ক্যাটারিংয়ের কাজ করে। যদিও মিস্ত্রি ও ক্যাটারিংয়ের কাজের আড়ালেই একটি দল মোবাইল চুরি করে বলে অভিযোগ।
লালবাজারের গোয়েন্দারা জানান, ওই মহিলা-সহ পুরো দলটির মূল টার্গেট কলকাতা ও আশপাশের জেলার মেলা ও বিভিন্ন মন্দির। পয়লা বৈশাখের আগে বিভিন্ন জায়গায় বসে চড়কের মেলা। ওই মেলাটিকেও টার্গেট করে এই চোররা। আবার বাংলার নববর্ষের দিন বা তার আগে থেকে ভিড় জমে ওঠে বিভিন্ন মন্দিরে। সেই মন্দিরগুলিও ছিল তাদের টার্গেটে।
মন্দির ও তার আশপাশে তারা পুণ্যার্থী সেজেই ঘুরে বেড়ায় মহিলা। অন্য পুণ্যার্থীরা যখন পুজো দিতে ব্যস্ত থাকেন, তখনই ওই মহিলা সুকৌশলে পকেট থেকে তুলে নেয় অ্যানড্রয়েড মোবাইল অথবা আই ফোন। আবার কখনও বা ভিড়ের মধ্যে পুজোয় ব্যস্ত থাকা মহিলাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগের চেন খুলে তারা মোবাইল তুলে নেয়। একইভাবে মেলার ভিড়ের মধ্যে ঘুরে বেড়িয়ে ভারতী ও তার সঙ্গীরা মোবাইল চুরি করে বলে অভিযোগ পুলিশের।
অবশ্য ধরা পড়ার পর গোয়েন্দাদের কাছে ভারতী দাবি করেছে যে, সে আগে কখনও ধরা পড়েনি। ফলে তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে থাকা পুরনো কোনও রেকর্ডও নেই। তারা ওই চোরাই মোবাইলগুলি বিশেষ কয়েকজন ‘রিসিভার’-এর কাছে বিক্রি করে। সেগুলি ‘রিসিভার’দের মাধ্যমে ভিনরাজ্য বা বাংলাদেশেও পাচার হয় বলে অভিযোগ। ধৃত মহিলার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনাও করে বলে জানা গিয়েছে। ধৃত মহিলাকে জেরা করে গ্যাংয়ের বাকিদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.