গৌতম ব্রহ্ম: গুগল ফেল। ইন্টারনেটে আতিপাতি করে খুঁজেও কিছু হাতে এল না। এই অস্ত্রোপচারের কোনও রেফারেন্স বা তথ্য কোথাও নেই। কী সেই অপারেশন? চিকিৎসা পরিভাষায় পোশাকি নাম, এন্ডোস্কোপিক ব্রেস্ট সার্জারি (Breast surgery) উইথ প্রাইমারি রিকনস্ট্রাকশন। অর্থাৎ বড় কোনও কাঁটাছেড়া না করে স্রেফ এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে ক্যান্সার (Breast cancer) আক্রান্ত স্তনের অংশ বাদ দেওয়া এবং পুনর্গঠন।
কিন্তু এ সম্পর্কে নেট দুনিয়া যে নীরব! ফলে অতিবিরল না সর্বপ্রথম, ধন্দ তাই নিয়ে। তবে ভারতের কোনও সরকারি হাসপাতালে যে এই পর্যায়ের ল্যাপারোস্কপিক অপারেশনের কোনও রেকর্ড নেই, সে ব্যাপারে প্রায় একমত সার্জনদের একাংশ। আর এমনই সাহসী ম্যাস্টেকটমি করে নজির গড়ল কলকাতার এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতাল। ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মহিলাকে বিকল্প পথের হদিশ দিয়ে নিশ্চিন্ত করল।
স্তন নারীর সৌন্দর্যের অন্যতম অঙ্গ। কিন্তু এই অঙ্গই ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে যখন প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে, তখন বেশিরভাগই রোগিণী বিপাকে পড়েন। প্রাণ বাঁচলে, মন মরবে। অতএব, অনেকেই কাটাছেঁড়ার ভয়ে সার্জারির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলেন। কেউ আবার চিকিৎসার বিকল্প পথ খোঁজেন। পরিণতি মারাত্মক। ব্যাধি গোকুলে বাড়তে থাকে। এবং একটা সময় আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।
যেমন গিয়েছে কামরুন্নেসার। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার একত্রিশ বছরের বধূটির বাঁদিকের স্তনে কর্কট রোগ বাসা বেঁধেছিল। প্রথমে কিছুদিন হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে কমানোর চেষ্টা করেন। কাজ না হওয়ায় অবশেষে ২০২১ সালে পিজি হাসপাতালে এসে ব্রেস্ট সার্জারি বিভাগে দেখান। চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, পরিস্থিতি আর অস্ত্রোপচারের পর্যায়ে নেই।
অধ্যাপক সার্জন ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার জানালেন, প্রথমে ছ’টি সাইকেল কেমোথেরাপি দিয়ে টিউমারকে ছোট করা হয়েছে। ১২ জানুয়ারি কামরুন্নেসাকে ভর্তি করিয়ে গত শুক্রবার হয়েছে অস্ত্রোপচার হয়। সেখানেই আভিনবত্ব। কী রকম? দীপ্তেন্দ্রবাবু জানিয়েছেন, বগলের নীচে ও পিঠে দুটো ছোট ফুটো করে এন্ডোস্কোপি পদ্ধতির মাধ্যমে অপারেশন হয়েছে। এমনকী, পিঠে মজুত ল্যাটিসমাস ডরসাইল পেশি তুলে এনে স্তনের প্রাথমিক পুনর্গঠনের কাজও সারা হয়েছে এন্ডোস্কোপি পদ্ধতিতে। ব্রেস্ট সার্জারিতে এমন পদ্ধতির প্রয়োগ ভারতে এই প্রথম বলেই দাবি দীপ্তেন্দ্রবাবুদের।
রোগিণীও খুশি। ভারমুক্ত কামরুন্নেসার প্রতিক্রিয়া, “ছুরি-কাঁচির অপারেশন হলে শরীরে প্রচুর কাটাছেঁড়ার দাগ হত। এ সব ভেবেই অন্য রাস্তা খুঁজছিলাম। কিন্তু এটা এতটাই সহজ যে, ভয়ের কোনও কারণই দেখি না। আমি এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল। বাইরে থেকে বোঝা যায়, এমন বড় দাগও হয়নি।”
চিকিৎসকদের দাবি, সাধারণ ব্রেস্ট সার্জারিতে বুক ও পিঠের মাঝখান থেকে বগল পর্যন্ত কাটতে হয়। অথচ এই পদ্ধতিতে মাত্র দুটো ছিদ্র। দীপ্তেন্দ্রবাবুদের আশা, এরপরের অস্ত্রোপচারগুলো আরও উন্নততর করে তোলা যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.