অভিরূপ দাস: বিবিএ’র ডিগ্রি নেই। দীর্ঘ ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনিই পড়াচ্ছেন ব্যাচেলর ইন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। তাও আবার শহরের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশুতোষ কলেজে। কীভাবে বিবিএ ডিগ্রি ছাড়াই এতদিন কলেজে পড়িয়ে গেলেন ওই অধ্যাপক? তাই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
ঘটনায় অভিযোগের আঙুল যাঁর দিকে কলেজের সেই অধ্যাপক রূপা ভট্টাচার্য যদিও জানিয়েছেন, “কেউ আমায় হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। এতদিন ধরে যখন পড়িয়েছি তখন নিশ্চয় আমার কোনও যোগ্যতা আছে।” তবে কি সত্যি ডিগ্রি রয়েছে তাঁর? না। রূপা ভট্টাচার্য নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন অ্যান্ড পার্সোনাল ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেছেন তিনি৷
কলেজ সূত্রে খবর, এত সামান্য যোগ্যতা নিয়েও অনেক অধ্যাপকের থেকে অতিরিক্ত বেতন পান ওই অধ্যাপক। কী করে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক কর্মী জানিয়েছেন, কলেজের পরিচালন সমিতিতে গালভরা পদ নিয়ে বসে আছেন ওই অধ্যাপক। রয়েছেন কলেজের সেফটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ইনচার্জও। কলেজের নানা জিনিসের টেন্ডারও পাশ হয় তাঁর হাত দিয়েই।
দীর্ঘদিন ধরে কলেজে বিবিএর কোর্স কো-অর্ডিনেটর ছিলেন ওই অধ্যাপক। সম্প্রতি তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সূত্রের খবর, ফের পুরনো জায়গা ফিরে পেতে কলেজেরই কিছু ক্ষমতাশীল গোষ্ঠী সাহায্য করছে তাঁকে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার প্রভাবশালী ছাত্রনেতা সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলেজের অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সোমনাথ বসুর নাম। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সার্থক। সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, “কলেজে আমার কোনও প্রভাব নেই। ফলে প্রভাব খাটিয়ে ওঁকে ফিরিয়ে আনব এমন যুক্তি ধোপে টেকে না।” এই বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন ধরেননি সোমনাথবাবু।
কলেজের উপাধ্যক্ষ অপূর্ব রায় যদিও পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন এই ঘটনা। তাঁর কথায়, “উনি এতদিন কোর্স কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। কিন্তু আমি উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর ওঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগের আমলে কী হয়েছে তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।” তবুও স্রেফ ডিপ্লোমা নিয়ে কীভাবে ডিগ্রির ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন ওই অধ্যাপক? অপূর্ববাবুর কথায়, “আগেই বলেছি ওঁকে পুরনো পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাকিটা ঠিক করবে গভর্নিং বডি।” কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট সৌগত রায় জানিয়েছেন, “একথা ঠিকই উনি কোর্স কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। কিন্তু এখন আর নেই। এই বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলতে পারব না।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অন্যতম একটি কলেজে কী করে বিবিএ ডিগ্রি ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ব্যাচেলর ইন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পড়িয়ে চলেছেন ওই অধ্যাপক তা নিয়ে অসন্তোষ দানা বাঁধছে অধ্যাপক মহলেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.