ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: শুধু বক্তব্য পেশ বা কর্মসূচি পালন করে নয়। প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেছে নেন কবিতা, ছবিকেও। নোটবাতিল থেকে শুরু সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় একাধিক কবিতা রচনা করেছেন তিনি। এবার CAA’র প্রতিবাদে তাঁর হাতে উঠল রং-তুলি। মঙ্গলবার ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এনিয়ে নীরব প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই বার্তা দিলেন, CAA নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তিনি রাজি। তবে শর্তসাপেক্ষে। পাশে পেলেন একাধিক স্বনামধন্য চিত্রশিল্পীকে। নীরব ধরনামঞ্চ যেন মুখর হয়ে উঠল ক্যানভাসে এঁকে রাখা ছবির সমাহারে।
CAA’র বিরোধিতায় লাগাতার কর্মসূচিতে নেমেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। কখনও ছাত্র-যুবদের সামনে এগিয়ে দিয়ে, কখনও বা দলের মহিলা নেত্রীবৃন্দ, কখনও আবার শীর্ষ নেতৃত্ব টানা প্রতিবাদ জারি রাখছে। তারই অংশ মঙ্গলবারের নীরব প্রতিবাদ। যেখানে কথা বলবে শুধু ছবি। রং-তুলি হাতে সৃষ্টিকর্মে মগ্ন মুখ্যমন্ত্রীই এদিনের প্রতিবাদের সূচনা করলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আঁকলেন এক দুখিনী নারীর মুখাবয়ব। যাঁর দু’চোখে জল। জলে ভেসে উঠছে লেখা – N আর O. কপালে লেখা CAA. কমলা-সাদা রং ব্যবহার করে আঁকা ছবিটির একদিকে লেখা NPR, আরেকদিকে লেখা NRC। সব নিয়েই চিন্তামগ্ন, ক্রন্দনশীলা সেই নারী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক পাশের ক্যানভাসেই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ চিত্র দেখা গেল শিল্পী শুভাপ্রসন্নের। গেরুয়া রঙের একটি মাছের হাঁ-মুখের শিকার হতে চলেছে লাল,নীল অজস্র মাছ। এ ছবিতে স্পষ্টই প্রতিভাত গেরুয়া শিবিরের আগ্রাসী মনোভাব। যে অন্য সব কিছুকে গ্রাস করে নেয়। শাসককে দৈত্যরূপে বর্ণনা করে ছবি আঁকলেন শিল্পী মনোজ মিত্র। শিল্পী যোগেন চৌধুরী জাতীয় পতাকার রং দিয়ে আঁকলেন কঙ্কালের মুখ। মাঝের অশোক স্তম্ভের সময় নির্দেশক কাঁটাগুলো এখন এলোমেলো হয়ে গিয়েছে, সেটাই তিনি বোঝাতে চাইলেন রেখায়-রঙে। প্রতিবাদী ছবি দেখা গেল আরও। কেউ গোটা ক্যানভাসে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে লিখলেন – আইডেন্টিটি। অর্থাৎ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের গেরোয় পড়ে অনেকেই যে পরিচয় হারাতে চলেছেন, সেটাই বোঝালেন শিল্পী।
যদিও নীরব প্রতিবাদ এবং তার হাতিয়ার মূলত ছবি, তাই সেখানে বক্তব্য রাখা অর্থহীন। তাই প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা নিজেদের কথা বিশেষ বললেন না। তারই মাঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “হিন্দুধর্ম সর্বজনীন, বিশ্বজনীন। রামকৃষ্ণ, রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দ, নজরুল, আম্বেদকর – সবাই সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলে গিয়েছেন। আমরা ঘৃণার রাজনীতি মানি না, হিংসা-বিদ্বেষ মানি না। এটা মূল্যবোধের বিষয়। শান্তিপূর্ণভাবেই মুখর হতে হবে।” প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বললেন, “গণতন্ত্রে আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু আগে আইন তৈরি হয়ে যাবে, তারপর বলবেন আলোচনা করব, সেটা হতে পারে না। আগে এই আইন প্রত্যাহার করুন, তারপর আলোচনায় বসতে রাজি।” কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় আজকের আঁকা এসব ছবির প্রদর্শনী হবে। তারপর দিল্লিতে তা প্রদর্শনীর পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূলের। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্য, যেখানে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ চলছে সেখানে এসব ছবি হাতিয়ার হতেই পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.