গৌতম ব্রহ্ম: অ্যাঙ্কোলাইজিং স্পন্ডেলাইটিস। শুনলেই শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নামে। নামারই কথা। এই রোগে যে বাঁশের মতো হয়ে যায় মেরুদণ্ড। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারায় চলাফেরা করার সহজাত ক্ষমতা। এমনই হয়েছিল হুগলির হরিপালের রাজকুমার ধাড়ার। ২০১২ সালে অ্যাঙ্কোলাইজিং স্পন্ডেলাইটিস (এএস) ধরা পড়ে এই যুবকের। বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, রাজকুমার এইচএলএবি২৭ পজিটিভ। এএস-এ আক্রান্ত ৯৫ শতাংশই এই অটোইমিউন ডিজঅর্ডারের শিকার। এই রোগের ওষুধ এখনও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের নাগালের বাইরে। সম্প্রতি ব্যথা উপশমের জন্য দু’টি ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ওইটুকুই। কিন্তু, সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোনও সম্ভাবনা এখনও তৈরি হয়নি।
এমনই দুরারোগ্য রোগ সারিয়ে তুলে বিরল নজির গড়ল রাজাবাজারের শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠ। এই সরকারি আয়ুর্বেদ হাসপাতাল এএস আক্রান্ত এক রোগীকে চিকিৎসা করিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলেছে। শুধু তাই নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানকে অবাক করে দিয়ে এইচএলএবি২৭ পজিটিভ রোগী এখন ‘নেগেটিভ’। জানান হাসপাতালের কায়াচিকিৎসা বিভাগের অধ্যাপক ডা. প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্র।
২০১০ সাল থেকে কোমরে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। আস্তে আস্তে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে গোড়ালি পর্যন্ত। একটা সময় রাজকুমারের হাঁটাচলাও বন্ধ হয়ে যায়। পরে এএস ধরা পড়ে। রাজকুমার জানিয়েছেন, “এই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল এমনটাই জানিয়েছিল। তারপরই যোগাযোগ করি শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠের ডা. মহাপাত্রর সঙ্গে। তিনিই পঞ্চকর্ম-সহ একাধিক পদ্ধতিতে আমার চিকিৎসা শুরু করেন।” ২০১২ সালে ওই হাসপাতালে ৪৫ দিন ভরতি ছিলেন রাজকুমার। বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এই যুবক জানিয়েছেন, “আবার যে চাকরি করতে পারব ভাবিনি। এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ। ডাক্তারবাবুর পরামর্শেই সম্প্রতি ফের এইচএলএবি২৭ টেস্ট করাই। রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।”
প্রদ্যোৎবাবু জানিয়েছেন, “রোগের থেকে রোগীর বল বেশি ছিল। তাই সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হয়েছে।” তাঁর দাবি, এই প্রথম নয়। এর আগেও রাজকুমারের মতো দু’জন এইচএলএবি২৭ পজিটিভ থেকে নেগেটিভ হয়েছেন। এই ঘটনাকে অতিবিরল আখ্যা দিয়েছেন অস্থিশল্যচিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কিরণ মুখোপাধ্যায় ও ডা. সুজয় কুণ্ডু। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, “আজ পর্যন্ত বিশ্বে এমন নজির নেই। রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু ভাল ওষুধ সম্প্রতি হাতে এসেছে। কিন্তু, উৎসমূল থেকে রোগ নির্মূল হওয়ার উদাহরণ নেই। অবিলম্বে গবেষণা শুরু প্রয়োজন।” ডা. লশ্রী মজুমদার অবশ্য জানিয়েছেন, “আয়ুর্বেদে অটো ইমিউন ডিজঅর্ডার সংক্রান্ত রোগের ভাল চিকিৎসা রয়েছে। এএস বা রিওম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের রোগীরা বৈদিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ আছেন, এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.