ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: পঞ্চম আসনে বাংলা থেকে দীনেশ বাজাজ নির্দল প্রার্থী হওয়ায় নয়া সমীকরণ রাজ্যসভা নির্বাচনে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, পঞ্চম আসনে কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের জয়ে বাধা দিতেই দীনেশকে সামনে রেখে ঘুঁটি সাজিয়েছে তৃণমূল। শাসকদল মুখে যাই বলুক, কিন্তু পুরনো ক্ষোভ থেকেই যে বিকাশকে রাজ্যসভায় তাঁরা চাইছে না শুক্রবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে এখন প্রশ্ন দীনেশ বাজাজের কি আদৌ সুযোগ রয়েছে? আসনু দেখে নেওয়া যাক কোন অঙ্কে রাজ্যসভায় শিকে ছিঁড়তে পারে তৃণমূল নেতার।
এই মুহূর্তে দলীয় প্রতীকে তৃণমূলের জয়ী বিধায়ক ২০৭ জন। কংগ্রেস, বামফ্রন্ট আর নির্দল বিধায়কদের মধ্যে থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ১৭ জন। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিধায়ক আছেন দু’জন। ওদিকে, বামেদের ২৬ আর কংগ্রেসের ২৫ জন মিলিয়ে জোটের পক্ষে বিধায়ক রয়েছেন ৫১ জন। বিজেপির প্রতীকে জয়ী বিধায়ক ছ’জন। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন ১০ জন। সব মিলিয়ে ২৯৩। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী ভোট হলে তৃণমূল তাদের প্রথম চারজন প্রার্থীকে জেতাতে ৪৯টি করে ভোট দেওয়ার কথা। এখানেই ২০৭-এর মধ্যে খরচ হয়ে যাচ্ছে ১৯৬টি ভোট। বাকি ১১টি ভোটের সঙ্গে গোর্খা বিধায়ক আর তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়কদের ১৭ ভোট মিলিয়ে থাকবে ৩০টি ভোট। যার পুরোটাই নির্দল প্রার্থীকে দিয়ে দিতে পারে তৃণমূল। একইসঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়করাও পড়তে পারেন দলবিরোধিতার দায়ে। সেই দায় নিয়েও দীনেশের জয়ে আরও ১৯টি ভোট কম পড়ছে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, এখানেই ভোটের খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করবে তৃণমূল।
বিগত এক রাজ্যসভার ভোটে বিরোধী দলের বিধায়কদের ভাঙিয়ে এনে ভোটে জিতেছিল তৃণমূল। এবার তারা উলটো পথেও যেতে পারে। সূত্রের খবর, একদিন আগেই বিজেপিতে যাওয়া শাসকদলের বিধায়কদের সঙ্গে কথা হয়েছে তৃণমূলের। তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দিতে পারেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথাতেও সেই জল্পনা উসকে গিয়েছেন। তাঁর দলের প্রতীকে জেতা বিধায়করা ভোটদানে অংশ না নিলেও দলবদলুদের দায়িত্ব তিনি নিতে চান না বলে জানিয়েছেন। ফলে এই ভোট তৃণমূল বা তৃণমূল সমর্থিত নির্দল প্রার্থী পেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর পরও কংগ্রেস বা বামফ্রন্টের বেশ কিছু বিধায়কের ভোটও নির্দল প্রার্থী তাঁকে দেওয়ার ‘অনুরোধ’ করবেন। খেলা সেখানেই।
এই ভোটে হুইপ দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু ক্রস ভোটের সম্ভাবনায় ভোট দেখিয়ে দিতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী তৃণমূল পঞ্চম আসনের জন্য হিসাবের ভোট পেতেও পারে অথবা বিরোধী বিধায়কদের ভোটদানে বিরত থাকতেও বলতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে মোট বিধায়কের সংখ্যা কমে গেলে প্রার্থীপিছু ভোটদানের সংখ্যাও কমে যাবে। নিয়ম রয়েছে আরও একটি। একজন বিধায়ক প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় পছন্দ অনুযায়ী পাঁচজন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। যেহেতু দীনেশ তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে ভোটে লড়ছেন, তাই প্রথম চারজন প্রার্থীকে বিধায়করা প্রথম পছন্দ হিসাবে কাঙ্খিত ভোটের চেয়ে কম ভোট দিয়ে ভোট বাঁচিয়ে রাখতে পারেন। কিন্তু জোটের প্রার্থী একজনই। তাই বিকাশবাবু জোটের প্রথম পছন্দের ৫১টি ভোট পেয়ে গেলে আর দ্বিতীয় পছন্দের ভোট পাওয়ার সুযোগ তাদের হাতে নেই। সেখানেই খেলা ঘুরে যেতে পারে। বাঁচিয়ে রাখা বিধায়ক সংখ্যা দিয়ে দ্বিতীয় পছন্দের ভোটে পাঁচটি আসনই জিতে নিতে পারে তৃণমূল।
এর মধ্যে অবশ্য মৌসমের প্রার্থীপদ নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিরোধীরা। এই প্রথম গনিখান চৌধুরির পরিবারের কেউ কংগ্রেসের প্রতীক ছেড়ে অন্য দলের প্রতীকে জনপ্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন। তবে তাঁর নামে মালদহ ও বারাসত আদালতে দু’টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তার পরও কেন তাঁকে প্রার্থী করা হল এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। জবাব দিয়েছেন মহাসচিব। বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।” পরে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “মামলার কথা তুললে তো মোদি-অমিত শাহও ভোটে লড়তে পারেন না।” তবে এমন কোনও মামলা থাকলে তা প্রার্থী ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানোর নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, “এক্ষেত্রে কী হবে সেটা সুপ্রিম কোর্টের বিষয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.