স্টাফ রিপোর্টার: মাঘের শীত বাঘের বিক্রমসম!
ভারতচন্দ্রের এই উক্তি যেন অগ্রহায়ণেই টের পাচ্ছে দক্ষিণবঙ্গবাসী। রোজই ধারাবাহিকভাবে নামছে শহর ও জেলাগুলির তাপমাত্রা। এত তাড়াতাড়ি এরকম জাঁকিয়ে ঠান্ডা শেষ কবে পড়েছে, তা মনে করতে পারছে আলিপুর আবহাওয়া অফিস।
রবিবার আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি কম। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, শীতের এই আমেজ বজায় থাকবে আরও দু’দিন। আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, কাশ্মীর ও উত্তরাখণ্ডে গত কয়েকদিনে তুষারপাত হয়েছে। তার প্রভাবে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে শৈত্যপ্রবাহ চলেছে। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল হাওয়া পারদ নামাচ্ছে বাংলার। তবে সিকিমের উপর দিয়ে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা বয়ে যাওয়ার কারণে আজ সোমবার রাতের পর থেকে তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। যদিও কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “তাপমাত্রা খুব একটা বাড়বে না। ১৫-১৬ ডিগ্রির মধ্যেই ঘোরাফেরা করবে।
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে পারদ বারো থেকে তেরো ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে৷ রবিবার দমদমের তাপমাত্রা নেমে আসে ১৪.১ ডিগ্রিতে। কনকনে ঠান্ডায় রাতে কম্বল মুড়ি দিতে হচ্ছে বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষকে৷ রবিবার বাঁকুড়ার পারদ নেমেছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ দিঘা ১৪.২ ডিগ্রি, শ্রীনিকেতন ১১.৭, বহরমপুর ১২.৪। এদিন তাপমাত্রার নিরিখে উত্তরবঙ্গকে হারিয়ে দিয়েছে দক্ষিণবঙ্গ৷ কোচবিহার ১৩.৮ ডিগ্রি। জলপাইগুড়ি ১৫.২, মালদহ ১৭.১৷ সবমিলিয়ে রাজ্যজুড়েই শুরু হয়েছে শীতের আদর৷
সাধারণত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শীত পা রাখে মহানগরে৷ কিন্তু এবছর আগেভাগেই রাজ্যে পা রেখেছে শীত। বস্তুত, নভেম্বরের শহরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪-র ঘরে নামার রেকর্ড রয়েছে। গত পাঁচ বছরের নথি ঘেঁটে আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিভিন্ন সময়ে কলকাতার তাপমাত্রা নেমেছে চোদ্দো ডিগ্রিতে। যেমন ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর শহরের তাপমাত্রা নেমেছিল ১৪ ডিগ্রিতে। ২০১৪-র ২৬ নভেম্বর শহরের তাপমাত্রা ছিল ১৪.১ ডিগ্রি। ২০১৫-র ২২ নভেম্বর শহরের পারদ নেমেছিল ১৪.৯ ডিগ্রিতে। কিন্তু এ বছরের মতো ধারাবাহিক পারা পতনের নজির সেভাবে নেই। যেভাবে শহরের তাপমাত্রা রোজই নামছে, তাতে এবারের শীত নতুন রেকর্ড গড়তে পারে বলে অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা। ১৩১ বছর আগে মহানগরের শীত দশের ঘরে নেমেছিল৷ সেই রেকর্ড ভাঙতে না পারলেও ২০১৬-র শীত নিশ্বাস ফেলতে শুরু করল ১৮৮৩ সালের ঘাড়ে! প্রশ্ন উঠেছে নভেম্বরেই চোদ্দো, ডিসেম্বরে কী হবে?
সেই যা-ই হোক, সমীক্ষা যা-ই বলুক, শীতের পোশাক বিক্রেতাদের অবশ্য পোয়াবারো। প্রতি বছরই ওয়েলিংটনে ভুটিয়াদের বাজার বসে। হরেক শীত পোশাকের পসরায় জমজমাট হয়ে ওঠে বিকিকিনি। বাজারে ব্যবসায়ী শুক্লা তামাং বলেন, “এবছর শুরুর দিকে বেচাকেনা ঢিমে তালে হচ্ছিল। হঠাৎ শীত পড়তেই গত ক’দিনে জমে উঠেছে বিকিকিনি। গ্র্যান্ড হোটেল লাগোয়া ফুটপাথ দেখলে তো দার্জিলিংয়ের ম্যাল মনে হতে পারে! সেখানে মাফলার, টুপির পসরা সাজিয়ে বসা ব্যবসায়ী সঞ্জীব হালদারের কথায়, “অন্যবারের তুলনায় এবার শীতটা বেশ কিছুদিন রয়েছে। সেই সুযোগে ভরভরন্ত ব্যবসা। শীতের শুরুতেই লক্ষ্মীলাভ!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.