রাহুল চক্রবর্তী: কথা দিয়ে কথা রাখল রাজ্য সরকার৷ এক মাসেরও কম সময়ে বিদ্যাসাগর কলেজের ভেঙে যাওয়া মূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হল৷ মঙ্গলবার দুপুরে হেয়ার স্কুল প্রাঙ্গণে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মূর্তির উন্মোচন করলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ শ্বেত ব্রোঞ্জমূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানালেন একে একে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি৷ এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও মঞ্চে ছিলেন সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব৷
১৪ মে৷ বাংলায় শেষ দফা লোকসভা নির্বাচনের আগে কলকাতায় ভোট প্রচার করতে এসেছিলেন অমিত শাহ৷ ছিল তাঁর রোড শো৷ আর তা ঘিরে আচমকাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ স্ট্রিট চত্বর৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে অমিত শাহকে কালো পতাকা দেখানো পড়ুয়াদের উপর চলে হামলা৷ সেই হামলার রেশ গড়ায় বিদ্যাসাগর কলেজ পর্যন্ত৷ শিক্ষাঙ্গনে আছড়ে পড়ে দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষের রেশ৷ দু’পক্ষের হাতাহাতির শিকার হন কলেজে প্রতিষ্ঠিত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শতাব্দী প্রাচীন মূর্তিটি৷ এনিয়ে ভোটের আগে রাজনীতি কম হয়নি৷ ঘটনার তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছিল দলমত নির্বিশেষে আমবাঙালি৷ ঘটনার নেপথ্যে বিজেপি সমর্থিত জনা কয়েক যুবকের যুক্ত থাকার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে৷ সে বিষয়টি এড়িয়ে রাজ্যে এসে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, তিনি পঞ্চধাতুর মূর্তি স্থাপন করে দেবেন৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সেই আলগা আবেগে গা ভাসাননি৷ তিনি ঘটনার যথাযথ প্রতিবাদ করে জানিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব মূর্তি পুনঃস্থাপিত করা হবে৷
সেই কথামতোই একমাসেরও কম সময়ে ধাতুর মূর্তি স্থাপিত হল আজ, মঙ্গলবার৷ একে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নিজেদের মতো করে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁদের আত্মিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করলেন৷ জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার, আবুল বাশার, শুভাপ্রসন্ন থেকে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, সোহিনী সেনগুপ্ত, অরিন্দম শীলরাও ব্যক্ত করলেন নিজেদের অনুভূতি৷ বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানালেন মুখ্যমন্ত্রীকে, এত দ্রুত মূর্তি পুনঃস্থাপন করে দেওয়ার জন্য৷ আর সবশেষে বলতে উঠে মুখ্যমন্ত্রী আবারও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ স্বরে বললেন, ‘আমরা টাকাপয়সা দিয়ে কিছু করি না৷ হৃদয় দিয়ে ছুঁয়ে কাজ করি৷ বিদ্যাসাগরের চারটি মূর্তি গড়া হচ্ছে, তা হৃদয় দিয়ে৷ একটা মূর্তি ভেঙে কি আমাদের হৃদয়ের চেতনা ভাঙতে চাইছে? তবে কি সংস্কৃতি ভুলিয়ে দিতে চায়? ভাষা রুদ্ধ করে দিতে চায়? কিন্তু জানবেন, মূর্তি ভেঙে বর্ণপরিচয় মোছা যায় না৷’ মূর্তি ভাঙার জন্য ফের বিজেপিকে দায়ী করে তাঁর একেবারে কড়া শাসন, ‘তৃণমূলের কেউ একাজ করলে, ঠাস ঠাস চড় মারতাম৷’
বিদ্যাসাগর মূর্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠার মঞ্চ থেকে এদিনও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের নিশানায় উঠে এল বিজেপি৷ একই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তিনি বারবার মনে করিয়ে দিলেন, বাংলা গুজরাট নয়৷ বাংলাকে গুজরাট তৈরির ষড়যন্ত্র চলছে৷ দাঙ্গাবাজদের রুখে দিতে হবে৷ করজোড়ে তিনি এই আহ্বানও জানান, ‘আজ বিদ্যাসাগরের মূর্তির পায়ের তলায় দাঁড়িয়ে বলছি, মনীষীদের অসম্মান করবেন না৷ বিদ্যাসাগর কলেজে যে দুষ্কৃতী তাণ্ডব চলেছে, তা অমার্জনীয় অপরাধ, বাংলার প্রতি অপমানজনক৷ বাংলার অপমান দেখলে তা জীবন দিয়ে রুখব৷ এটাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা৷ আমাকে সরিয়ে দিন, গলা কেটে দিন৷ তবুও আমি কাজ করে যাব৷’ মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের বসতবাড়ি এবং সেখানকার ভগবতী বিদ্যালয়টিকে হেরিটেজের স্বীকৃতি দেওয়া হবে৷ এদিন উন্মোচনের পর মূর্তিটি নিয়ে বিদ্যাসাগর কলেজ পর্যন্ত হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিশিষ্টজনেরা৷
মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সকলে সাধুবাদ জানালেও এদিনের অনুষ্ঠানে সমালোচনার কাঁটাও ছিল৷ একদিকে এনআরএস হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার নিগ্রহের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতিতে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা, সেখানে হস্তক্ষেপ না করে মুখ্যমন্ত্রীর মূর্তি উন্মোচনে ব্যস্ত, তা নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে৷
ছবি: পিন্টু প্রধান৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.