অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: “ওর মতো ছেলে হয় না। ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক। ডাক্তারি পড়তে গিয়ে এমন পরিণতি ভাবা যায় না। এর পর বাড়ির আর কাউকে ডাক্তারি পড়তে পাঠাব না।” কাঁদো কাঁদো গলায় এমনটাই জানালেন পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের বউদি সুলেখা মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ডাক্তারি পড়তে গিয়ে ছাত্রকেই যদি হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকতে হয়, তাহলে কোন ভরসায় ডাক্তারি পড়তে পাঠাব বাড়ির ছেলে মেয়েদের? দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে কবে গ্রামে ফিরবেন পরিবহ? সেই অপেক্ষাতেই এখন দিন গুনছে পরিবহর পরিবার ও গ্রামবাসীরা। পরিবহ-র পরিবার ও গ্রামবাসীদের দাবি, দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।
স্কলারশিপের টাকায় পড়াশোনা করে ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে অত্যন্ত ভাল ফল করেছিলেন পরিবহ। ডোমজুড়ের ঝাপড়দহ ডিউক ইনস্টিটিউশন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকের হাওড়া জেলায় প্রথম হন পরিবহ। একই সঙ্গে জয়েন্টের প্রস্তুতির জন্য একটি বেসরকারি সংস্থায় পড়াশোনা করে মেডিক্যাল পড়ার সুযোগ পান। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে থেকেই ডাক্তারি পাশ করেছেন। ডাক্তারি পড়ার সময় থেকেই কলকাতায় থাকেন পরিবহ। পনেরো দিন অন্তর গ্রামের বাড়িতে যান তিনি।
গত শনিবার জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে ষষ্ঠীতলার বাড়িতে গিয়েছিলেন পরিবহ মুখোপাধ্যায়। সেদিন বাড়িতে দিদি-জামাইবাবু এসেছিলেন। রবিবার বিকেলে আবার কর্মস্থলে ফিরে যান জুনিয়র এনআরএসের এই জুনিয়র ডাক্তার। আর তার পরই ঘটে সেই ঘটনা। রোগীর পরিবারের সঙ্গে আসা কিছু যুবক পরিবহকে মারধর করে। মাথায় গুরুতর চোট পেয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। পরিবহের বাবা-মা গুরুতর অসুস্থ। দু’জনেই ছেলের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। ছেলেকে চিকিৎসক করার স্বপ্ন নিয়ে পড়তে পাঠিয়েছিলেন পরিবহর বাবা-মা। কিন্তু তাঁকে যে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকতে হবে তা ভাবতেও পারেননি তাঁরা। ছোটবেলায় স্কুলে কোনওদিন দ্বিতীয় হননি ডাক্তারির এই ছাত্র। ছোটবেলায় বাড়ির কাছেই ষষ্ঠীতলার পল্লি সংস্কার বিদ্যামন্দিরে পড়াশোনা করেছেন। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর পঞ্চম শ্রেণিতে ডোমজুড় ডিউক ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন পরিবহ। ২০১১ সালে মাধ্যমিকে ভাল ফল করে ডোমজুড় ব্লকে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন পরিবহ।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.