সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও মৌলানা নূর-উর রহমান বরকতির বিতর্কিত মন্তব্য যেন থামছেই না৷ বুধবার টিপু সুলতান মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ড তাঁকে ইমামের পদ থেকে অপসারিত করলেও পদ ছাড়তে নারাজ বরকতি৷ পাল্টা তাঁর বক্তব্য, “এই বিষয়ে আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলব৷” খবরটি জানিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে৷
সম্প্রতি বরকতির বিরুদ্ধে লালবাতি-সহ একাধিক ইস্যুতে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে মসজিদের ট্রাস্টি বোর্ড৷ ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান শাহজাদা আনোয়ার আলি জানিয়েছেন, বরকতির বিরুদ্ধে মসজিদের ঘরের চাবি বলপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তাঁরা বউবাজার থানায় দায়ের করেছেন৷
UPDATE:Noor-ur #RahmanBarkati refuses to quit as #TipuSultanMasjid imam, says nobody has right to remove him; he was sacked earlier today
— Press Trust of India (@PTI_News) May 17, 2017
সম্প্রপ্তি নয়া কেন্দ্রীয় আইন মোতাবেক বরকতি তাঁর গাড়ি থেকে লালবাতি সরাতে অস্বীকার করায় বিতর্ক দানা বাঁধে৷ তাঁর কাছে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমার লালবাতি নিয়ে সবার এত মাথাব্যথা কেন? আমার গাড়ি থেকে লালবাতি সরানোর হিম্মত নেই কারও৷ এতে বেআইনি কিছুই নেই৷ যদি কিছু বেআইনি হয় তাহলে আরএসএস বেআইনি, মোদি বেআইনি৷” তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রাজ্যের মুসলিমদের প্রতি বঞ্চনা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন বরকতি৷
তবে বরকতির যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে শাহজাদা আনোয়ার আলি শাহ জানিয়েছেন, রাজ্যের শান্তিপ্রিয় মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে চলেছেন বরকতি৷ শুধু লালবাতি নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেও মুসলিম সমাজে কোণঠাসা হয়ে পড়েন বরকতি৷ তবে লালবাতি ইস্যুতে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে ক্ষোভ আছড়ে পড়ে৷ নয়া কেন্দ্রীয় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বরকতি জানান, ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে তিনি এই অনুমোদন পেয়েছেন৷ এছাড়া বর্তমান রাজ্য সরকারও তাতে সম্মতি দিয়েছে৷ তাঁর দাবি ছিল, খোদ মোদি এলেও তাঁর গাড়ি থেকে লালবাতি খুলতে পারবেন না৷
এখানেই শেষ নয়, ধর্মীয় বিভেদ উসকে তিনি বলেন ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইলে, মুসলিমরাও পাকিস্তান চাইবে৷ এহেন মন্তব্যের পরই ইমামের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের একাংশ৷ রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরির নেতৃত্বে আয়োজন করা হয় এক প্রতিবাদ সভার৷ সেখানে মসজিদের তরফে সাফ জানানো হয়, ইমামের বক্তব্যের সঙ্গে মসজিদ কর্তৃপক্ষ সহমত নয়৷ ইমাম আরএসএস-এর হাত শক্ত করছে বলেও অভিযোগ করা হয়৷ মুসলিমরাও ভারত চায়, পাকিস্তান চায় না বলেই সাফ জানানো হয়৷ টিপু সুলতান মসজিদের বাইরে এক পথসভায় উলেমা-এ-হিন্দ প্রধান ও রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বার্তা দেন, বরকতির মতো যাঁরা দেশের বুকে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের প্রতি সমব্যথী, তাঁরা যেন পাকিস্তানে চলে যায়৷ ভারতের একজন প্রকৃত মুসলিম কখনও দেশের অখণ্ডতার উপর আঘাত নেমে আসতে দেবেন না৷ এ রাজ্যের মুসলিমরা এ দেশের জন্য প্রাণ দিতেও রাজি৷ যে শিক্ষা স্বামী বিবেকানন্দ দিয়েছেন, যে শিক্ষা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দিয়েছেন, সেই শিক্ষা এ রাজ্যের হিন্দু-মুসলিমদের সম্প্রীতির বার্তা শিখিয়েছে, বলেন সিদ্দিকুল্লাহ৷
কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ে ঘুরে বে়ড়ানোর জন্য বরকতিকে গ্রেপ্তার করার দাবি তোলে রাজ্য বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সম্পাদিকা লকেট চট্টোপাধ্যায় দাবি তোলেন, বিশেষ সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার জন্যই বরকতিকে ছাড় দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব কার্যত হুঙ্কার দিয়ে জানায়, প্রশাসন ও পুলিশ বরকতিকে গ্রেপ্তার করতে না পারলে তাঁরাই ওই সংখ্যালঘু নেতাকে তুলে লালবাজারে দিয়ে আসবেন। ঘরে-বাইরে চাপ বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত অবশ্য শনিবার গাড়ি থেকে লালবাতি খুলে ফেলতে বাধ্য হন বরকতি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.