ফাইল ফটো
স্টাফ রিপোর্টার: সাঁইবাড়ির গণহত্যা দিবসে প্রতিবাদীদের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের খুনিদের বিরুদ্ধে সরব হবেন কি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি? গণহত্যার ৫৩ বর্ষপূর্তির প্রতিবাদসভার প্রস্তুতির মুখে শুক্রবার এমনই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বলা বাহুল্য, তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সাঁইবাড়ি নিয়ে তীক্ষ্ণ প্রশ্নে প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস শিবির। কারণ, ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ বর্ধমানের সাঁইবাড়িতে গণহত্যা হয়েছিল সিপিএম নেতা নিরুপম সেন, বিনয় কোঙারদের নেতৃত্বে। একমাস বয়সি ভাগ্নের নামকরণের অনুষ্ঠানের মধ্যেই ঢুকে কংগ্রেসের দুই যুবনেতা প্রণব ও মলয় সাঁইকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করেছিল সিপিএমের ওই নেতারা। ঘটনার উল্লেখ করে এদিন কুণাল বলেন, ‘‘হাড়হিম করা সেই সন্ত্রাসের ঘটনায় নিহত দুই ছেলের রক্তে মাখা ভাত জোর করে খেতে সেদিন বাধ্য করা হয়েছিল মা মৃগনয়না দেবীকে।’’ সেদিনের সাঁইবাড়ির দুই কংগ্রেসকর্মীর নারকীয় হত্যার ঘটনার স্মৃতিতে নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রতিবছর প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল মুখপাত্রর কথায়, ‘‘সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জোট করে কংগ্রেস সব শহিদদের ভুলে গেলেও তৃণমূল কংগ্রেস ওই সাঁইবাড়ি, কেন্দুয়ায় কথা ভোলেনি। প্রতিবছর শহিদ স্মরণে যেমন নানা কর্মসূচি নিচ্ছে, তেমনই মানুষের কাছে সিপিএমের সেই ‘লাল-সন্ত্রাস’-এর কথা তুলে ধরে।
এবছরও ১৭ মার্চ সাঁইবাড়ি দিবস পালন হবে।’’ এরপরই সিপিএমের সঙ্গে জোট করে সাগরদিঘি জেতার পর লাল জামা পরে উদ্বাহু হয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস করা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে কুণালের মোক্ষম প্রশ্ন, ‘‘কী অধীরবাবু, সাঁইবাড়ির গণহত্যা দিবসে প্রতিবাদে সরব হয়ে খুনিদের শাস্তি চাইবেন তো?’’ কুণালের সাঁইবাড়ি তোপের পর প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরেও বাম জমানায় সিপিএম ক্যাডারদের হাতে গণহত্যা ও নানা রাজনৈতিক খুনের ঘটনার লজ্জাজনক তথ্য নতুন করে আলোচিত হতে শুরু করেছে। তবে বর্ধমানের সাঁইবাড়ির গণহত্যা বা হাওড়ার কেন্দুয়ায় ‘হাত’ চিহ্নে ভোট দেওয়ার জেরে কংগ্রেস কর্মীদের হাত কেটে নেওয়ার ঘটনা যে আরও বেশি করে প্রচারে নিয়ে আসা হবে, তা জানিয়ে দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ, ভাগ্নে অমৃতের নামকরণের অনুষ্ঠানের দিনে সিপিএম নেতা নিরুপম সেন ও বিনয় কোঙারদের নেতৃত্বে সাঁই পরিবারের উপর হামলা করে ক্যাডারবাহিনী।
লাল সন্ত্রাসের বাধা দিতে গিয়ে গুরুতর জখম হন অমৃতের বাবা অমল যশ এবং মা স্বর্ণলতা। সেদিন বেঁচে গেলেও ইন্দিরা গান্ধীর কাছে সমস্ত ঘটনার তথ্য তুলে ধরা গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী নবকুমার সাঁইকেও বছর দেড়েক পরে খুন করে দেয় সিপিএম ক্যাডাররা। যঁার নামকরণ দিবসে সঁাইবাড়িতে এই গণহত্যা, সেই অমৃত যশ শুক্রবার বলেন, ‘‘আটের দশকের শেষ থেকেই প্রতিবছর মমতাদির উদ্য়োগেই ১৭ মার্চ দুই মামার হত্যার প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়। দিন কয়েক আগেও মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ পাঠিয়ে দুই মামা প্রণব ও মলয় সাঁইয়ের শহিদ বেদি নতুন করে তৈরি হচ্ছে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম পুরপ্রধানকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছেন।’’ গত ২৫ বছর ধরে সাঁইবাড়ি গণহত্যা নিয়ে প্রতিবাদ দিবস তৃণমূলই পালন করে আসছে, কংগ্রেসের কেউ খোঁজখবরও নেয় না বলে স্পষ্ট জানান অমৃত। আসলে সাঁইবাড়ি, কেন্দুয়ার মতো বহু গণহত্যায় প্রায় ৪০ হাজার কংগ্রেস কর্মীকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত সিপিএমের সঙ্গে জোট করার পর ঘরে বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে অধীর চৌধুরিরা। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস ও সিপিএমের এই অনৈতিক জোটের আগে বাম জমানার সেই ‘রক্তাক্ত ইতিহাস এবং লাল সন্ত্রাসের কথা’ ফের বাংলা জুড়ে তুলে ধরবে তৃণমূল কংগ্রেস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.