গৌতম ব্রহ্ম: প্রতিরোধের স্বাভাবিক বর্ম যদি গায়ব হয়ে যায়, লড়াই চলবে কী করে? কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে প্রধান গেমচেঞ্জার হল অ্যান্টিবডি। অ্যান্টিবডির মাত্রাই ঠিক করে দেয়, রোগীর ভবিষ্যৎ। এমনকী বাঁচা-মরাও। কিন্তু চিকিৎসকদের ধন্দে ফেলে অনেক রোগীর শরীরেই পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে না। হলেও লোপাট হয়ে যাচ্ছে দু’-তিন মাসের মধ্যে! কেন?
অবশেষে রহস্য উন্মোচিত হল। বিশ্ববন্দিত ‘সেল (Sail)’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের দাবি, করোনা সংক্রমণের জেরে ‘টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর’ নামক সাইটোকাইন ‘সেকেন্ডারি লিম্ফয়েড’ টিস্যুতে পৌঁছয় এবং ‘ফলিকুলার টি হেল্পার সেল (follicular t helper cell)’-কে মেমোরি বি লিম্ফোসাইট তৈরি করতে বাধা দেয়। ফলে জার্মিনাল সেন্টার ও বি লিম্ফোসাইট তৈরি হয় না। যার জেরে অ্যান্টিবডি ভাণ্ডার দু’-তিন মাসেই নিঃশেষিত হয়ে যায়। গবেষণার স্বার্থে মোট সতেরোটি মৃতদেহের অটোপসি হয়েছে। যার মধ্যে এগারো জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডে। সবার শরীরেই জার্মিনাল সেন্টার তৈরি না হওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। গবেষণাপত্রের উপর সম্প্রতি গুরুত্ব সহকারে মতামত প্রকাশিত হয় আর এক বিশ্ববন্দিত সায়েন্স ম্যাগাজিনে। গবেষণার ফলাফলে যারপরনাই উৎসাহিত শহরের ভাইরোলজিস্টরা।
অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, গবেষণালব্ধ ফলটি অবশ্যই ভ্যাকসিন নির্মাণের সময় মাথায় রাখতে হবে। তবেই মেমোরি বি লিম্ফোসাইট তৈরি হয়ে অ্যান্টিবডির উৎপাদন সুনিশ্চিত হবে। এবং ভ্যাকসিনের সুফল মিলবে। বস্তুত আটমাস কেটে গেলেও করোনা নিয়ে গোলোকধাঁধার জট এখনও কাটেনি। বরং রহস্য ঘনীভূত করে সম্প্রতি পুনঃসংক্রমণের বেশ কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। প্রমাণিত হয়, কোভিডজয়ীর দেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। অ্যান্টিবডি স্বল্পায়ু কেন, তার ব্যাখ্যার পাশাপাশি গবেষণাপত্র জানিয়ে দিল, টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টরের বিরুদ্ধে কার্যকর মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি তৈরি করা ও ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জার্মিনাল সেন্টার গঠনের প্রক্রিয়া জারি রাখতে হবে। এই তথ্য কোভিড মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা নেবে। বাড়িয়ে দেবে কোভিড টিকার কার্যকারিতা। এমনই বিশ্বাস সিদ্ধার্থবাবুর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.