Advertisement
Advertisement

কোন দিকে মুকুল? দিনভর নাটক দিল্লি এবং কলকাতায়

নাড্ডাজি, অমিতজির সঙ্গে দেখা করে সক্রিয় রাজনীতি করব, দিনের শেষে 'গুগলি' মুকুলের।

Whose side is Mukul Roy? TMC or BJP | Sangbad Pratidin
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:April 18, 2023 9:59 pm
  • Updated:April 18, 2023 10:18 pm  

স্টাফ রিপোর্টার: মুকুল রায় কোন দিকে? তৃণমূলে নাকি বিজেপিতে? সোমবার সন্ধে থেকে যে ‘নাটক’ শুরু হয়েছিল, মঙ্গলবার দিনভর সেটা চলল। মুকুলের পরিবার, তৃণমূলের বয়ানবাজি চলল। দিনের শেষে আবার মুকুল নিজেই ‘গুগলি’ দিলেন।

নিয়োগ দুর্নীতিতে আরও পাঁচ তৃণমূলের মন্ত্রী-বিধায়ক-সাংসদের নাম ভাসিয়ে সোমবার বেলায় টুইট করেছিল বিজেপি। ওই তালিকায় বীজপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু রায়ের নামও ছিল। আর বিকেল হতেই সল্টলেকের বাড়ি থেকে রহস‌্যজনকভাবে উধাও হয়ে যান স্বয়ং মুকুল রায় (Mukul Roy)। দিল্লির বিমানে যখন তিনি উঠে পড়েছেন এবং তাঁর ইন্ডিগোর ফ্লাইট টেক-অফ করার জন‌্য রানওয়ের দিকে গড়াবে, ঠিক তখনই বাবার সন্ধান পান শুভ্রাংশু। বিমানবন্দরে ম‌্যানেজার এবং বিমানবন্দর থানার পুলিশকে ‘অসুস্থ’ বাবাকে বিমান থেকে নামিয়ে আনার জন‌্য অনুরোধ করেন। কিন্তু অন্তর্দেশীয় বিমান নিরাপত্তাবিধি মোতাবেক বিমান একবার রানওয়ের দিকে চলতে শুরু করলে সাধারণ অবস্থায় তাকে থামিয়ে যাত্রী নামানো যায় না। অন্তত মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে এমনই দাবি করেছেন মুকুলপুত্র। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, রাজনীতি আর টাকার খেলা চলছে। তাঁর দাবি, “এই ঘটনার পিছনে বড় টাকার খেলা রয়েছে। বাবা এখন স্রেফ বিধায়ক। কোনও কমিটি বৈঠকে যেতে পারে না। ফলে বিধায়ক হিসাবে মাত্র ২১ হাজার বেতন পান। এই টাকায় ৩ জনকে নিয়ে বিমানে করে দিল্লি গেলেন কীভাবে! একটি বড় এজেন্সির অবাঙালি একজনকে বলা হয়েছে মুকুলবাবুর হাতে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতির পান্ডা, জীবনের হাতেখড়ি তাঁর কাছেই, CBI জেরায় হদিশ মিলল জীবনেকৃষ্ণের ‘গুরু’র]

বাবাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কথাও জানান শুভ্রাংশু। জানান, তাঁর বাবা দিনে ১৮টা ওষুধ খান। ইনসুলিন নেন। কোথায় কী অবস্থায় আছেন, ওষুধ খাচ্ছেন কিনা সেসব জানা যাচ্ছে না। তবে বিমানবন্দর থানার পুলিশ তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করলেও দিল্লি পুলিশ করেনি বলে জানান। পরে জানা যায়, মুকুল রায়ের সর্বক্ষণের সঙ্গী ভগীরথ মাহাতো আর তাঁর গাড়ির চালক রাজু মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক। তবে বিমান কলকাতার মাটি ছেড়ে ওড়ার পর থেকেই ৩ জনের ফোন বন্ধ। তবে মুকুল যে দিল্লি যাচ্ছেন, ততক্ষণে খবর হয়ে যায়। দিল্লি বিমানবন্দরে (Delhi Airport) নেমে রাতেই সাংবাদিকদের সামনেই পড়েন মুকুল। তাঁর এই গতিবিধি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মুকুল রায় জানান, “আমি দিল্লির বিধায়ক, সাংসদ। আমি তো দিল্লিতে আসতেই পারি।” তাঁর এই বক্তব‌্য নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। শুভ্রাংশুর দাবি, “বাবা অসুস্থ। সবটাই অসংলগ্নভাবে বাবা বলেছেন।” এই পরিস্থিতিতে শুভ্রাংশুর অভিযোগের ভিত্তিতে বিমানবন্দর থানা তদন্ত শুরু করেছে। মঙ্গলবার বেলায় বিজেপি (BJP) নেতা পীযূশ কানোরিয়াকে ডেকে পাঠিয়ে দীর্ঘক্ষণ জেরাও করা হয়। দমদম বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা যায় বিধায়কের সঙ্গে কিছুটা সময় বিজেপি নেতা পীযূশ কানোরিয়াও ছিলেন। থানায় আসেন শুভ্রাংশুও।

[আরও পড়ুন: ‘আজ বিলকিসের সঙ্গে হয়েছে, কাল আরেকজনের সঙ্গে হবে’, ফের গুজরাটকে তোপ সুপ্রিম কোর্টের]

এর পাশাপাশি এদিন দুপুরে বিমানবন্দর থানার একটি দল দিল্লি রওনা হয়ে গিয়েছে। তবে এদিন মুকুলের নামে নানা জল্পনা ছড়ালেও তিনি সারা দিন কী করেছেন, কেথায় কোথায় ঘুরেছেন, কারও সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা, তার কোনও হদিশ মেলেনি। তবে শুভ্রাংশু (Subhrangshu Roy) আশঙ্কার কথা বলে জানান, “কাউকে না জানিয়ে বাবার এভাবে দিল্লি যাওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সব থেকে বড় আশঙ্কা বাবাকে ভুল বুঝিয়ে অন্যদলে যোগদান করিয়ে দিতে পারে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) বদনাম করার জন্য এটা করা হতে পারে। কিন্তু এর কোনও প্রভাব পড়বে না। কারণ তিন বছর আগের মুকুল রায়ের এখন আর মুকুল রায়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।” একইসঙ্গে বলেন, “অসুস্থ মানুষকে নিয়ে এভাবে রাজনীতি করা ঠিক নয়। আমাদের পরিবারের পাশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে দাঁড়িয়েছেন, তা কোনওদিন ভুলতে পারব না।”

তৃণমূল কংগ্রেসের অবশ‌্য সবটাই ‘পারিবারিক ব‌্যাপার’ বলে জানিয়েছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) কথায়, “এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। দলের তরফ থেকে কিছু বলার নেই। সম্পূর্ণ পারিবারিক ব্যাপার। শুভ্রাংশু রায় যে অভিযোগ করছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার উপর তদন্ত হোক।” মুকুলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে কুণালের মন্তব‌্য, “উনি বিজেপিতে আছেন কি নেই, সেটা নিয়ে বিধানসভার অধ‌্যক্ষের একটা পর্যবেক্ষণ আছে। তবে তাঁর বিষয়টা অনেকটা উচ্চমার্গের। মুকুল রায় বিভিন্ন স্তরের মায়াবী শিল্পের তারকা। উনি ৩ দিন বিজেপিতে থাকেন, ৩ দিন তৃণমূলে। রোববার বাড়িতে বসে চা খান। যতদিন ধরে দলের কর্মসূচি চলছে, ততদিন ধরেই তো মুকুলবাবু নিখোঁজ। আবার নতুন করে নিখোঁজ কী করে হবেন?”

শুভ্রাংশুর দাবি ছিল, এই সব কিছুই অভিষেককে বদনাম করার চক্রান্ত। কুণালের জবাব, “সব ব্যাপারে অভিষেককে টেনে এনে ঢাল করা ঠিক না। মুকুলবাবু আগেই তো বলতে পারতেন যে অভিষেককে নিয়ে সিবিআই (CBI) যা করছে সেটা অন্যায়। বলেননি তো। একটা জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাতে অভিষেকের নাম টেনে আনার কোনও যুক্তি নেই। এটা নিয়ে যদিও আমি দলের তরফে উত্তর দেওয়ার কেউ নই।” এর সঙ্গেই কুণাল মনে করিয়ে দিয়েছেন, “মুকুল রায়কে যদি কেউ অপহরণও করে থাকে, তাহলে অপহরণকারীর ক্ষতি। তাঁকে টাকার জন্য নিয়ে যাবে নাকি রাখার জন্য অপহরণকারীদের টাকা দিতে হবে, এটাই তো বুঝতে পারছি না। গোটা বিষয়ে শুভ্রাংশু বলতে পারবে।” অন‌্যদিকে, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার বলেছেন, “বড় নেতা গায়েব হয়ে যাচ্ছেন। কোথায় যাচ্ছেন কেন যাচ্ছেন কোথায় রয়েছেন কেউ জানে না। এটার তদন্ত হওয়া উচিত।”

দিনের শেষে সবচেয়ে বড় ‘গুগলি’টি অবশ্য মুকুল রায় নিজেই দিয়েছেন। এক সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন,”আমি বিজেপিতেই আছি। অসুস্থতার জন্য কিছুদিন রাজনীতি করতে পারিনি আবার সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করব। অমিতজি, নাড্ডাজিদের সঙ্গে দেখা করব।” তবে এখানেও মুকুলের ‘অসংলগ্ন’ কথা ধরা পড়েছে। তিনি বলেছেন, “আমি বিজেপির লোকসভার সাংসদ। বরাবরই সাংসদ ছিলাম। কোনওদিন বিধায়ক ছিলাম না। লোকসভার অধিবেশনের জন্য দিল্লিতে এসেছি।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement