ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: জয়ের পর শংসাপত্র নিতে যাওয়ার আগে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। মঙ্গলবার বেলা গড়াতেই ভোটের ফলের ট্রেন্ড মোটামুটি পরিষ্কার হওয়ার পরপরই বিদায়ী মেয়রকে ডেকেছিলেন মমতা। তবে কি তিনিই আবার মেয়র? এ নিয়ে জল্পনার মুখে ফিরহাদের বক্তব্য, “আশীর্বাদ চাইতে গিয়েছিলাম। প্রণাম করতে গিয়েছিলাম। উনি তো আমার দিদি।” মেয়র নির্বাচন নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য এড়িয়ে তিনি বলেছেন, “আমাদের নেত্রী গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন।”
আগামী ২৩ ডিসেম্বর তৃণমূলের পুরদল তাদের দলনেতা তথা মেয়র নির্বাচন করবে। সেদিনই জয়ী প্রার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা ফিরহাদের সঙ্গে সেরেও ফেলেছেন মমতা।
এর পাশাপাশি কাউন্সিলরের ন্যূনতম সংজ্ঞা কী তারও একটা মাপকাঠি তৈরি করে দিয়েছেন ফিরহাদ (Firhad Hakim)। বলেছেন ‘যখন ডাকি তখন পাই’– এটাই হল কাউন্সিলর হওয়ার মাপকাঠি। বস্তুত, নিজের বারবার জয়ের পিছনেও কারণ হিসাবে এই বিষয়টিকেই উল্লেখ করেছেন ফিরহাদ। তাঁর যুক্তি, “যাঁরা নতুন কাউন্সিলর হয়েছেন, তাঁদের একটাই ট্যাগলাইন- ‘যখন ডাকি তখন পাই’। যে কাউন্সিলর এটা করে নিতে পারেন, তাঁকে কেউ হারাতে পারবেন না। আপনাকে আপনি হারাতে পারবেন না। আর যে কাউন্সিলরকে পাওয়া যায় না, সে জিততেও পারবে না।”
এদিন আলিপুরের গণনাকেন্দ্রে গণনা শুরু হওয়ার পরপরই এক দফায় ঘুরে যান ফিরহাদ। তাঁর বড় মেয়ে প্রিয়দর্শিনী হাকিম তাঁর মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছিলেন। বরাবর তিনিই গণনাকেন্দ্রে ছিলেন। ফল বেরলে বেরিয়ে বাবাকে ডাকলে ফিরহাদ শংসাপত্র নিতে আসেন। তার আগে প্রায় গোটা সময়টাই চেতলা অগ্রণীর চত্বরে কাটিয়েছেন। সেখানেই কলকাতার ভবিষ্যতের উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূলের পরবর্তী পুরবোর্ডের পরিকল্পনার কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের সকলের সঙ্গে আলোচনা করে ‘কলকাতার দশ দিগন্ত’-এ যে প্রতিশ্রতির তালিকা দিয়েছিলেন, এ বার তা পূরণ করার পালা।
এবার বিজেপি আর সিপিএম প্রায় সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিয়েছে। বিরোধী দল হিসাবে যথাক্রমে তিনটি ও দু’টি করে আসন জিতেছে তারা। বলতে গেলে বিধানসভায় বামশূন্য হওয়ার অপবাদ কিছুটা ঘুচেছে। কলকাতা তথা রাজ্যে বিরোধী হিসেবে বামেদের ফিরহাদ দেখতে চান বলে মন্তব্য করেছেন। যদিও বলেছেন, “তার মানে এই কারণে নয় যে, বিজেপির প্রতি আমার কোনও অ্যালার্জি আছে। কিন্তু এই বিভাজনের রাজনীতি, এই আমার সঙ্গে আপনার লাগিয়ে দেওয়া, এই বিভেদের রাজনীতি বাংলায় চলে না।”
বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী শিবির থেকে বিশেষ করে বিজেপির তরফ থেকে তাঁকে ব্যক্তিগত নিশানা করা হয়েছিল। সে প্রসঙ্গ তুলে ফিরহাদ আক্ষেপই করেছেন এদিন। বলেছেন, “আমার তো কষ্ট লাগে, যখন শুধু মুসলিম বলে আমাকে দেশদ্রোহী বলা হয়। কলকাতাকে করাচি বলা হয়। মিনি পাকিস্তান বলা হয়। আমার অপমানিত লাগে। আমার মনে হয়, বারবার করে আমাকে প্রমাণ দিতে হবে আমি ভারতীয়। আমিও তো ভারতেরই সন্তান। এই ভারতে জন্মেছি। এই ভারতের খেয়ে বড় হয়েছি। আগামী দিনে এই ভারতেই আমার মৃত্যু হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.