রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: এতদিন ধরে বঙ্গ বিজেপিতে বিক্ষুব্ধ শিবির যেসব অভিযোগ তুলে আসছে দলের ক্ষমতাসীন শিবিরের বিরুদ্ধে। কার্যত সেই একই অভিযোগে এবার সরব বিজেপির বিধায়করা। এক) দলের নেতৃত্বের সঙ্গে মনোমালিন্য। বা কারও থেকে আঘাত পেয়েই বিধায়করা অনেকে দল ছেড়েছে। বিধায়কদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে খামতি দেখা যাচ্ছে। দুই) বিধায়করা কীভাবে চলবেন বিধানসভায়, তার কোনও গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে না পার্টি নেতৃত্বের তরফে। তিন) যারা যোগ্য সেই সমস্ত বিধায়ককে দায়িত্ব দিয়ে সংগঠনের কাজে লাগানো হচ্ছে না। বিজেপি বিধায়কদের একটা বড় অংশ এই তিন অভিযোগ নিয়ে দলের অন্দরে সরব।
বিধায়কদের মনের এই ক্ষোভ সামাল দিতে চাপে পড়ে তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকল বঙ্গ বিজেপি (BJP)। যেখানে বিধায়কদের দলের সংগঠন ও অন্যান্য বিষয়ে বিধায়কদের বক্তব্য শুনবে বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের নেতারা। বিজেপির পরিষদীয় দলের এক সদস্যের কথায়, “পার্টির তরফে যেগুলি খামতি রয়েছে বলে আমরা মনে করছি তা তুলে ধরব পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে।” সূত্রের খবর, প্রথমে ঠিক হয়েছিল নির্দিষ্ট কয়েকজন বৈঠকে বলবেন। কিন্তু পরে ঠিক হয়েছে যে বিধায়করা বলতে চান সকলেই বলবেন। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) জানিয়েছেন, বিধায়কদের সঙ্গে বসা হবে। দিনটা ঠিক করা হচ্ছে।যদিও সূত্রের খবর, কাল ১১ মার্চ বা তিন-চারদিনের মধ্যেই বৈঠক হতে পারে।
বিধায়কদের মধ্যে এই ক্ষোভ কেন? সম্প্রতি আদি-নব্য দ্বন্দ্বে বিজেপিতে বিদ্রোহ চরমে। তাছাড়া, পুরনোদের রাজ্য ও জেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বহু বিধায়ককে জেলার সংগঠনের থেকে দূরে রাখা হয়েছে। দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখিয়ে একাধিক বিধায়ক দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও ছেড়ে ছিলেন। একাধিক মতুয়া বিধায়ক ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কারণ, রাজ্য কমিটির পদাধিকারীতে মতুয়াদের কোনও প্রতিনিধি নেই। বিধায়কদেরও রাখা হয়নি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও (Shantanu Thakur) বিষয়টি নিয়ে সরব হন। আবার শনিবার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে দলের বৈঠকে বাঁকুড়া জেলার এক বিধায়ক তো জেলা সভাপতিকে বলেছেন দলের জেলা কমিটি গঠনে তাঁকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। দলের বিধায়কদের সঙ্গে জেলা পার্টির নেতাদের একটা সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ। বহু জেলা কমিটির নেতৃত্ব সংগঠনের বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার দলের বিধায়কের পরামর্শও নেয় না। বিধায়কদের জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদেও রাখা হয় না।
অর্থাৎ, যারা যোগ্য তাদের সংগঠনের কাজে লাগানো হচ্ছে না। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। পদ্ম শিবিরের বিধায়কদের একটা বড় অংশেরই দল সম্পর্কে এটা বড় অভিযোগ। এক বিধায়কের কথায়, এই সমন্বয়ের অভাব থাকার জন্যই অনেকের পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের উপর ক্ষোভ রয়েছে। তাছাড়া, বিধানসভার অধিবেশন শুরুর আগে দলের বিধায়য়কদের কী ভূমিকা থাকা উচিত, এলাকায় বিধায়করা কীভাবে কাজ করবে। তার কোনও সুনির্দিষ্ট গাইড লাইনও পার্টির তরফে দেওয়া হয় না। এমনই অভিযোগ তুলেছেন গেরুয়া শিবিরের একাধিক বিধায়ক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.