গৌতম ব্রহ্ম: ৯৮ বছর ৫ মাস। সোয়াব টেস্টের রিপোর্টে জ্বলজ্বল করছে রোগীর বয়স। ৮দিন পর ১০০ ছুঁইছুঁই সেই শ্রীপতি নারায়ণ করোনাকে (Coronavirus) তুড়ি মেরে উড়িয়ে সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরলেন। তিনিই এই মুহূর্তে রাজ্য তথা দেশের প্রবীণতম করোনাজয়ী বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার বিকেলে কলকাতার হাসপাতাল থেকে ডায়মন্ড হারবারের বাড়িতে ফেরা শ্রীপতিবাবু হয়ে উঠলেন এই মুহূর্তে মারণ জীবাণুর সঙ্গে লড়তে থাকা যোদ্ধাদের কাছে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
দিন কয়েক আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে করোনামুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন ৯৪ বছরের লালমোহন শেঠ। বিডন স্ট্রিটের এই বাসিন্দাই ছিলেন রাজ্যের প্রবীণতম করোনাজয়ী। আর শ্রীপতিবাবু এদিন লালমোহবাবুকেও পেরিয়ে গেলেন। ৯৪-এর সংগ্রামী জীবনের পিছনে ফেলে নয়া রেকর্ড গড়ল ৯৮-এ দাঁড়িয়ে থাকা প্রবীণের লড়াই।
গত ২২ জুন, ডায়মন্ড হারবারের ১৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রীপতি নারায়ণের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাঁকে কলকাতার কাঁকুড়গাছির এক বেসরকারি নার্সিংহোমে রেফার করেন CMOH 1 ডাক্তার বাসুদেব মণ্ডল। ২৫ তারিখ থেকে সেই হাসপাতালে ডাক্তার সৌম্যদীপ চক্রবর্তীর অধীনে শ্রীপতিবাবু চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৩০ জুন নিউটাউনের বেসরকারি ল্যাবরেটরি থেকে শ্রীপতিবাবুর সোয়াব টেস্ট করানো হয়। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এরপর বুধবার দুপুর দুটোয় সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ির পথ ধরেন তিনি। বাড়ি ফেরার সময় তাঁকে বিদায় জানাতে হাজির ছিলেন ডাক্তার সৌম্যদীপ চক্রবর্তী, নার্সিংহোমের ডিরেক্টর রাহুল গাড়িয়া। বৃদ্ধের হাতে পুস্পস্তবক তুলে দিয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হয়। ডাক্তার সৌম্যদীপ চক্রবর্তী বলেন, ”এই বয়সেও ওনার প্রেশার, সুগার নেই। তাই এত দ্রুত সুস্থ করা গেল।”
এদিকে, শ্রীপতিবাবু বাড়ি ফিরতে এলাকায়ও খুশির হাওয়া। স্বাগত জানাতে আসেন ছেলে কনক, অন্যান্য আত্মীয়। হাজির ছিলেন মহকুমাশাসক শ্রীকান্ত সাহা এবং CMOH দেবাশিস রায়। তাঁদের সবাইকে দেখে খুব খুশি শ্রীপতিবাবু। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ”খুব ভাল আছি, কোনও অসুবিধা নেই।” রোগীর বয়স ৮০ বছর পেরিয়ে গেলেই সাধারণত বিপজ্জনক মাত্রা নেয় COVID সংক্রমণ। কিন্তু তাকে তুড়ি মেরে প্রায় ৯৯বছরেও যেভাবে এই মারণ ব্যধিকে জয় করেছেন শ্রীপতিবাবু, তাতে অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
এখনও পর্যন্ত প্রবীণতম কোভিডজয়ী ব্যক্তি হিসেবে নাম রয়েছে ইথিওপিয়ার আদিস আবাবা এলাকার বাসিন্দা তিলাহুন ওলডেমাইকেলের। করোনামুক্ত হতে ১১৪ বছরের পিলাহুনের সময় লেগেছিল ২১ দিন। কিন্তু শ্রীপতিবাবু মাত্র ৮ দিনেই সুস্থ! এও এক রেকর্ড বটে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.