ছবি: প্রতীকী
গৌতম ব্রহ্ম: আক্রান্ত হচ্ছেন যত মানুষ, তাঁদের প্রতি একশোজনের মধ্যে ৬৫ জনই চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠছেন। উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গে কোভিড জয়ের এই হার সর্বভারতীয় গড়ের (৫৮ শতাংশ) তুলনায় বেশি। তা সত্ত্বেও আত্মসন্তুষ্টির কোনও অবকাশ রাখতে চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং লড়াই আরও ক্ষুরধার করে মৃত্যুতে যাতে আরও লাগাম দেওয়া যায়, সে জন্য হাসপাতালগুলিকে আহ্বান জানালেন তিনি। বললেন, ‘নিরাময়ের হার ৯৯ শতাংশ করতে হবে। আমি বলব, মত্যুর হার আরও কমান। আরও মানবিক হোন।’
মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কোমর বেঁধেছে সরকারি কোভিড হাসপাতালগুলি। সংকটজনক কোভিড রোগীদের উন্নততর চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জোরকদমে। একদিকে টালিগঞ্জের এমআর বাঙুর হাসপাতাল চালু করেছে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া। অন্যদিকে রেমডিসিভির, ফ্লাভিপিরাভিরের মতো জীবনদায়ী ওষুধ আনতে উদ্যোগী বেলেঘাটা আইডি।
এই মুহূর্তে বাঙুরে ২৩টি সিসিইউ (CCU) বেড। স্থির হয়েছে, সংখ্যাটা বাড়িয়ে একশো করা হবে। যার ৫৫টিতে থাকবে ভেন্টিলেটরের সুবিধা। পুরোদস্তুর কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরের প্রথম পর্বে এখানে রোগীদের সিসিইউয়ে রেখে চিকিৎসার সুযোগ ছিল না। কোভিড এক্সপার্ট কমিটির সুপারিশ মেনে দ্রুত কোভিড রোগীদের জন্য সিসিইউ চালু করা হয়। সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিংয়ের আটতলায় খোলা হয় ২৩ শয্যার সিসিইউ, প্রতিটি ভেন্টিলেটরযুক্ত। জানা গিয়েছে, বাঙুরের ভাঁড়ারে মোট ৩৫টি ভেন্টিলেটর ছিল। অর্থাৎ, বাড়তি ছিল ১২টি। নতুন সম্প্রসারিত সিসিইউয়ের জন্য নতুন করে আরও ২২টি ভেন্টিলেটর আনা হয়েছে। ছ’তলা ও চারতলায় বসানো হবে বাড়তি ৭৭টি বেড। বাড়তি বেডে পরিষেবা দেওয়ার জন্য বাড়তি চিকিৎসক ও নার্সের ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাঙুরের সুপার ডা. শিশির নস্কর। আরও জানান, ১২ জন ডাক্তার ইতিমধ্যে যুক্ত আছেন সিসিইউয়ে। আর ৩৫ জন ডাক্তার ও ১২৪ জন নার্স লাগবে। নতুন ডাক্তার-নার্সদের যথাযথ তালিম দিয়ে কাজে নামানো হবে। শেখানো হবে সিপিআর-সহ বেশ কিছু জীবনদায়ী টেকনিক।
কোভিডে মৃত্যুর হারে রাশ পরানোর লক্ষ্যে বেলেঘাটা আইডিতে সম্প্রতি ৩২ শয্যার সিসিইউ ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। আইসিএমআরের অনুমতি নিয়ে সেখানে শুরু হয়েছে প্লাজমা থেরাপি। ইতিমধ্যে ছ’ জন মুমূর্ষু রোগীর উপর থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাল ফল মিলেছে বলে দাবি করেছেন ডাক্তারবাবুরা। তবে আইসিএমআর(ICMR) -এর ছাড়পত্র পেয়ে ‘করোনার ওষুধ’ হয়ে ওঠা রেমডিসিভির, ফ্লাভিপিরাভির, কোভিফরের উপর আইডি এখন বেশি নজর দিচ্ছে। টোসিলিজুমাবের মতো মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, দু’ সপ্তাহের মধ্যেই অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলি চলে আসবে আইডিতে।
কোভিড (Covid) রোগীর ক্ষেত্রে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়াটা অন্যতম উপসর্গ। যার জন্য শ্বাসকষ্ট শুরু হলেই রোগীকে সিসিইউয়ে স্থানান্তরিত করা দস্তুর। কিন্তু শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশ জুড়েই সিসিইউর বেড বাড়ন্ত। তাই প্রয়োজন হলেও বহু রোগীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার পরিষেবা দেওয়া যায় না। দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে আরও একটি তথ্য। একটি সমীক্ষায় পূর্বাভাস, জুলাইয়ের শেষে কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা এত বেড়ে যাবে যে, গোটা দেশেই সিসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটরের প্রবল আকাল মাথা চাড়া দেবে। এহেন পরিস্থিতিতে বাঙুরে সিসিইউ বেডের সংখ্যাবৃদ্ধিতে নিঃসন্দেহে স্বস্তির বার্তা পাচ্ছে চিকিৎসকমহল।
পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসা ব্যবস্থা কেমন চলছে, তা দেখতে দু’টি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কোভিডে মৃত্যু হলে কী পরিস্থিতিতে তা হল, চিকিৎসায় ঘাটতি ছিল কি না, এ সব যাচাই করা হবে। কী করলে আরও ভাল হবে। এবং কো-মর্বিডিটি রোগীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে কি না, সে সব খতিয়ে দেখবেন টিমের সদস্যরা। কারও কোভিডে মৃত্যু হলে কী কী ভাবে চিকিৎসা হয়েছে, সে সবও দেখবেন তাঁরা। তা ছাড়াও সরকারি সূত্রের খবর, কোভিডের সামাজিক প্রভাব নিয়ে খুব শীঘ্রই একটি কমিটি তৈরি হবে। এখানে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থাও কাজ করবে বলে জানা গিয়েছে। এই কমিটিতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি নাট্যকর্মী বা সমাজের অন্য স্তরের কলাকুশলীরাও থাকতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.