ফাইল ছবি
অভিরূপ দাস: কোভিড আবহে বেসরকারি হাসপাতালে লাগামছাড়া খরচে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। রাজ্যে সংক্রমণের গোড়াপত্তনের ন’মাস পরেও এই সমস্যার সমাধান এখন অধরা। যার প্রমাণ রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের সোমবারের রায়। এদিনও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার দায়ে পাঁচ হাসপাতালকে টাকা ফেরত দিতে বলল স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন (WBCERC)। আর সেই তালিকায় সবার প্রথমে নাম রয়েছে ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের।
গত ৩ জুলাই ভারতী বসাকের স্বামী দীপক বসাক ভরতি হয়েছিলেন সিএমআরআই (CMRI) হাসপাতালে। টানা ১ মাসের মধ্যে ২১ দিনই ছিলেন আইসিইউতে। চিকিৎসা বাবদ তাঁর বিল হয় ১০ লক্ষ ৩ হাজার ১৮৮ টাকা। এই বিল নিয়েই কমিশনের দ্বারস্থ হয় বসাক পরিবার। বিল খতিয়ে দেখতে গিয়ে কমিশনের চক্ষু চড়কগাছ। রোজ আলাদা করে সাড়ে সাতশো টাকা হিসেবে জুনিয়র ডাক্তারের চার্জ ধরেছে হাসপাতাল। শুধু তাই নয়, অকারণে রোজ একই প্যাথোলজিক্যাল টেস্ট করা হয়েছে রোগীর। কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এটা ঠিক নয়। বিল থেকে ২০ শতাংশ ছাড় দিতে হবে। অবিলম্বে ১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলেছি সিএমআরআইকে।
দিন কয়েক আগেই, দুর্গাপুরের হেলথ ওয়ার্ল্ড হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন সুপ্রতীম। ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, চিকিৎসার কোনও মেডিক্যাল রেকর্ড দেয়নি হাসপাতাল। বরং চাইলে খারাপ ব্যবহার জুটেছে। যদিও হাসপাতালের বক্তব্য, যিনি মেডিক্যাল রেকর্ড দেন তিনি ছুটিতে ছিলেন। যদিও সেই অজুহাত মানতে চায়নি কমিশন। তাই ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে হেলথ ওয়ার্ল্ডের।
তবে সবচেয়ে অমানবিক অভিযোগ উঠেছে বি পি পোদ্দার হাসপাতালের বিরুদ্ধে। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, মাত্র ৯ ঘন্টা হাসপাতালে থাকার জন্য ৯৫ হাজার টাকা বিল করেছে হাসপাতাল। জগদীশ যাজুর অভিযোগ, আমার স্ত্রী অরুণা যাজুকে ওখানে ভরতি করেছিলাম। ঘড়ি ধরে ৯ ঘন্টা ২৯ মিনিট ভরতি ছিল। তার মধ্যে ওষুধের বিল ২১ হাজার ৪৮২ টাকা! কীভাবে সম্ভব! বিল দেখে চমকে গিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশনও। ৫০ হাজার টাকা রেখে বাকি সমস্ত টাকা রোগীর পরিবারকে ফেরত দিতে বলেছে কমিশন। কোভিড আবহে নন্দকিশোর বেহেতি ভরতি ছিলেন ডিভাইন নার্সিংহোমে। মাত্র ৩ দিনে নন্দকিশোরের বিল হয়েছে ৪৩ হাজার ৬২৯ টাকা। সে বিল খতিয়ে দেখেও ১২ হাজার ২০৭ টাকা টাকা ফেরত দিতে বলেছে কমিশন।
করোনায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মচারী ছেলেকে হারিয়ে তাঁর মা শুভ্র সরকারও কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসার বিল ছিল আকাশছোঁয়া। তা দিতে দেরি হওয়ায় মৃতদেহ ছাড়ছিল না ডায়মন্ড হারবার রোডের কস্তুরি হাসপাতাল। পরে সেই বিল খতিয়ে হতবাক কমিশনের চেয়ারম্যান। ৭ হাজার টাকা করে বেড ভাড়া ছাড়াও সামান্য স্যানিটাইজারের জন্যেও প্রতিদিন হাজার টাকা করে নিয়েছে ওই হাসপাতাল। তাই অবিলম্বে ওই হাসপাতালকে মৃতের পরিবারের হাতে দু’লক্ষ টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
কোভিড চিকিৎসায় পিপিই ছাড়াও দৈনন্দিন ডাক্তারের ফিজ বেঁধে দিয়েছে রাজ্য সরকার। এরপরেও অতিরিক্ত বিল নেওয়ার জন্য ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠছে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে। কোনওভাবেই যে তাতে রাশ টানা যায়নি, তা কমিশনে নথিভুক্ত অভিযোগের তালিকা থেকেই স্পষ্ট। যদিও স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন বারবারই আবেদন জানিয়ে বলছে, অর্থের জন্য কোনওভাবেই সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.