সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: ‘গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরু দেব: মহেশ্বরা…’ প্রতিবারের মতোই এবারেও রাত পোহালে শিক্ষক দিবস। যেদিন এই ‘পরম ব্রহ্ম’রা সম্মাননায় ভূষিত হন। পড়ুয়াদের প্রদত্ত সম্মাননা। তা কতটা প্রচারের আলোকে বা কত বড় উপহার মিলল বড় কথা নয়। এ এক অনন্য প্রাপ্তি। সবে শিক্ষকতার দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষিকাই হোক বা চক-ডাস্টার-ব্ল্যাকবোর্ডের সঙ্গে ২০টা বসন্ত কাটিয়ে দেওয়া মধ্যবয়স্ক শিক্ষক। এদিনটিতে তাঁরা সবাই এক। অগুন্তি শিশুপ্রাণ তাঁদের ছত্রছায়ায় মহীরূহতে পরিণত হয়েছে। এদিন তাঁদের ঘিরেই সাজসাজ রব পড়েছে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্কুলে। আগামিকালের দিনটি নিয়ে ভালবাসায় ভাসছেন সুদেববাবুও। আমতা পীতাম্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুদেব মুখোপাধ্যায়। শিক্ষক জীবনে অনন্য কর্মকাণ্ডের জন্য রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান পেতে চলেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, আগামীকাল নজরুল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে এই ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান গ্রহণ করবেন সুদেব মুখোপাধ্যায়। প্রতিবছরই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বেশ কয়েকজন শিক্ষককে এই সম্মান প্রদান করা হয়। শিক্ষাজগতে যাঁরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের মধ্যে থেকেই একজনকে বেছে নেওয়া হয়। প্রতিটি জেলাতেই শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডের বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশেষ ব্যক্তিত্বকে নির্বাচন করা হয়। এবার হাওড়া থেকে নির্বাচিত হয়েছেন শিক্ষক সুদেব মুখোপাধ্যায়। তাঁর এই সম্মান প্রাপ্তির খবরে খুশি পীতাম্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকর্মী শিক্ষক ও পড়ুয়ারা।
বলা বাহুল্য, ছাত্র-প্রিয় হিসেবে সুপরিচিত সুদেববাবু সম্মাননার খবরে অভিভূত। ইতিমধ্যেই সম্মান প্রাপ্তির টাকা খরচের একটা বিলি ব্যবস্থা করেও ফেলেছিলেন তিনি। ‘শিক্ষারত্নে’-র প্রাপ্ত টাকার একটা অংশ যাবে তাঁর কর্মক্ষেত্র পীতাম্বর উচ্চবিদ্যালয়ে আর একটি অংশ যাবে রামকৃষ্ণ মিশন। বাকি টাকা যাবে উদয়নারায়ণপুরের দুটি বন্যাবিধ্বস্ত পরিবারের সাহায্যার্থে। এদিকে জেলার মধ্যে তাঁকে নির্বাচিত করায় রাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি প্রিয় শিক্ষক। তবে এখানেই শেষ হওয়ার নয় সুদেববাবুর কৃতিত্ব। বেশকিছু পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি করেন তিনি। এরমধ্যে বইও লিখেছেন কয়েকটা। তা থেকে প্রাপ্ত রয়্যালটিও দুঃস্থ ছেলে মেয়েদের শিক্ষা খাতে ব্যয় করেন তিনি। এমনকী, তাঁর তৈরি মাধ্যমিকের প্রশ্নমালাও বেশ সমাদৃত। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও এগিয়ে রয়েছেন এই শিক্ষক। নাট্য নির্দেশক হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তাঁর। সুযোগ পেলেই বিভিন্ন সচেতনতা মূলক নাটকের মঞ্চায়নে আগ্রহী হয়ে ওঠেন সুদেব মুখোপাধ্যায়। এমন একজন মানুষের জন্যই তো ‘শিক্ষারত্ন’। অন্তত তেমনটাই দাবি তাঁর পরিচিতদের।
‘শিক্ষারত্নে’-র আলোচনায় অবধারিতভাবেই এসে পড়ে ছেলেবেলার প্রসঙ্গ। একমাত্র শিক্ষক দিবসেই সমস্ত ছেলেমানুষির ক্ষমা ছিল। গোটা বছর ক্লাসের দুষ্টু ছেলেটির দিকে তীক্ষ্ণ নজর থাকলেও এদিন শিক্ষক-শিক্ষিকার দৃষ্টিতে মিশে থাকে আশকারা মিশ্রিত স্নেহ। সেই স্নেহের ভরসাতেই বোধ হয় ক্লাসঘর সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছোটছোট হাতের রাশি। কেউ রঙিন কাগজের শিকল বানায়। কেউ বা আঠার সঙ্গতে দেয়ালে সাঁটে। গোপনে শিক্ষকদের চমকে দিতে চলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। নাচ, গান ,কবিতা, কিম্বা নাটক। অনেকেই আবার সাহসে ভর করে বক্তব্যও রাখে। তৈরি হয় উপহারও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.