দীপঙ্কর মণ্ডল: স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থা আরও আধুনিক করতে এবার শিল্পপতিদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে স্কুল গড়বে রাজ্য সরকার। এ বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি হয়েছে। পিপিপি মডেলে (PPE) চলবে স্কুলগুলি। স্কুলশিক্ষা দপ্তর এ বিষয়ে একটি গাইডলাইনও তৈরি করেছে। নয়া ব্যবস্থায় সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলগুলি ‘মার্জ’ হয়ে যাবে।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ২৯০০ স্কুলকে মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary) স্তরে উন্নীত করেছে। প্রতিবছর সরকারের অধীন স্কুলগুলি থেকে গড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় ১২ লক্ষ এবং উচ্চমাধ্যমিক দেয় ৯.৫ লক্ষ পড়ুয়া। এত বিশাল সংখ্যার ছাত্র-ছাত্রী সর্বোচ্চ সমমানের পঠন-পাঠনের সুযোগ পায় না। সরকারের অব্যবহৃত পরিকাঠামো এবার সেই কাজে ব্যবহৃত হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে চলবে স্কুল। জমি ও পরিকাঠামো সরকারের। প্রশাসনিক দেখভালের দায়িত্বে থাকবে বেসরকারি সংস্থা।
কোন মাধ্যমে স্কুল চলবে তা ঠিক করবে সেই বেসরকারি সংস্থা। অর্থাৎ স্কুলটি বাংলা, নাকি হিন্দি নাকি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চলবে তা ঠিক করবেন লগ্নিকারী। তাঁরাই হবেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়োগকর্তা। সমগ্র শিক্ষা অভিযানের প্রকল্প অধিকর্তা, স্কুলশিক্ষা দপ্তরের কমিশনারের প্রতিনিধি, অর্থ দপ্তরের প্রতিনিধি ও আইন দফতরের প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হবে। কমিটি গোটা বিষয়ে নজরদারি করবে।
অধ্যাপকদের সংগঠন আবুটার (ABUTA) বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের মতো রাজ্যও এবার কর্পোরেট গোষ্ঠীর স্বার্থে শিক্ষার বেসরকারিকরণের পথে হাঁটতে চলেছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গৌতম মাইতি বলেন, “এতদিন মুখে জাতীয় শিক্ষানীতির (National Education Policy) বিরোধিতা করার পর রাজ্য যে খসড়া প্রকাশ করেছে তা পুরোপুরি জাতীয় শিক্ষানীতির (২০২০) আদলে। পিপিপি মডেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অর্থ সরকার জনগণের শিক্ষার সব দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নিতে চাইছে। এর পরিণতিতে সরকারি অর্থায়নে শিক্ষার যেটুকু সুযোগ সাধারণ বাড়ি থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আছে তাও আর থাকবেনা। যার টাকা আছে সেই কেবল শিক্ষার সুযোগ পাবে।” সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণ নস্কর এ প্রসঙ্গে বলেন, “রাজ্য সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষাদপ্তর পিপিপি আঙ্গিকে স্কুল চালানোর যে পরিকল্পনা করেছে সেই খবরে আমরা উদ্বিগ্ন। এই পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে স্কুলের ভবন ও লাগোয়া জমি যা সরকারি অর্থ এবং জমিদাতাদের আনুকুল্যে গড়ে উঠেছে তা বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তারা তা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে যা সমর্থনযোগ্য নয়। এর ফলে শিক্ষা আরও ব্যয়সাপেক্ষ হবে এবং গরীব মানুষের হাতের বাইরে চলে যাবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.