সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ তিন বছর লড়াইয়ের পর ২০১৮ সালের জুন মাসে বীরভূমের দেউচা-পাঁচামি কয়লাখনি রাজ্যের হাতে এসেছিল। হরিণসিংহ দেওয়ানগঞ্জের ওই কয়লাখনিতে আনুমানিক ২১০ কোটি ২ লক্ষ টন কয়লা মজুত থাকায় আশা জন্মেছিল রাজ্যের মানুষের মনে। তাঁরা ভেবেছিলেন, এই কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হলে বীরভূম ও আশপাশের জেলা থেকে লক্ষাধিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে। নবান্নের তরফে বীরভূমের মহম্মদবাজারে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা লগ্নি হবে বলেও আশা করা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল, রাজ্য বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে। এমনিতেই রাজ্যে বিদ্যুতের কোনও ঘাটতি নেই। বরং অন্য রাজ্যকে বিক্রি করা হচ্ছে। এই অবস্থায় দেউচা-পাঁচামির মতো খনি হাতে পাওয়ার পর কয়লার জন্য কেন্দ্রের বা অন্য সংস্থার মুখাপেক্ষী থাকতে হবে না রাজ্যকে। কিন্তু, যতদিন যাচ্ছে ততই যেন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে এই কয়লাখনির ভবিষ্যৎ!
কিছুদিন আগে সিবিআই-রাজীব কুমার টানাপোড়েনের সময় আচমকা দিল্লি গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছিলেন, রাজ্যের পাওনা টাকা চাইতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। ওই বৈঠকে দেউচা-পাঁচামি কয়লাখনি উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানান তিন। কিন্তু, তার পরেরদিনই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বীরভূম না আসার অনুরোধ জানান বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। উল্লেখ করেন, অধিকাংশ ছাড়পত্র ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে প্রকল্পটি উদ্বোধন করাতে চাইছে রাজ্য সরকার। এখনও পর্যন্ত ওই এলাকায় বসবাসকারী জনজাতিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি। এসব গোপন রেখেই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এসে বিষয়টিকে বৈধ করতে চাইছে তারা। কিন্তু, এতে প্রধানমন্ত্রীর ইমেজই খারাপ হবে। তাই তিনি যেন রাজ্যের আমন্ত্রণ সাড়া না দেন।
প্রধানমন্ত্রীর তরফে এবিষয়ে কিছু জানানো না হলেও আটকে গিয়েছে উদ্বোধন। আর এর মাঝে সোমবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে এই প্রকল্পের বিষয়ে একরাশ অভিযোগ জানালেন রাজ্যের আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিরা। দেউচা-পাঁচামি এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি ওই দলে রাজ্যের অন্য এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষও ছিলেন। রাজভবনে এসে জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করে স্থানীয় জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের সমস্যার কথা জানান তাঁরা। বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডার নেতৃ্ত্বে ওই প্রতিনিধি দল রাজভবনে এসেছিলেন।
জনজাতি সমাজের প্রতিনিধিদের অভিযোগ, এতদিন পর্যন্ত এই রাজ্যের জনজাতি এলাকাগুলিতে খনি বা অন্য প্রকল্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আদিবাসীরাই। দেউচা-পাঁচামির ক্ষেত্রেও তাই ঘটতে চলেছে। রাজ্যপাল যেন এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। সব কথা শুনে তাঁদের সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি দেউচা-পাঁচামি গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.