বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: জেলার নেতাদের বিক্ষোভ। আর তা দমন করতে গোটা জেলা কমিটিকে আলিমুদ্দিনে তলব। সেখানে নেতাদের আকচাআকচি বন্ধ করতে কার্যত জোর করেই জেলা সম্পাদক করা হলো প্রবীণ মৃণাল চক্রবর্তীকে। সেইসঙ্গে ভোটাভুটিতে গঠিত হল ৬৬ জনের জেলা কমিটি। আজ থেকেই শুরু হচ্ছে সিপিএমের (CPM) রাজ্য সম্মেলন। তার আগের দিন উত্তর ২৪ পরগনার অশান্তি ঠেকাতে ব্যস্ত থাকতে হল আলিমুদ্দিনের শীর্ষ কর্তাদের।
বিনা ভোটাভুটিতে উত্তর ২৪ পরগনা (North 24 Parganas) জেলা কমিটি গঠন অসম্ভব হয়ে ওঠে। ৬৬ জনের কমিটিতে ঢোকার জন্য নাম পড়ে ৭৮ জনের। রবিবার সকাল থেকে বারাসতে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও গণনা শেষ হতে মধ্যরাত গড়িয়ে যায়। ৪৭০ জন প্রতিনিধি ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও নাটক প্রাক্তন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তীর মতো বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি বিরক্ত হয়েই ভোটদানে বিরত থাকেন। গণনা শেষে দেখা জেলার কয়েকজন তাবড় নেতা চলে যান পিছনের সারিতে। এর মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব, জেলা সম্পাদকের দৌড়ে থাকা তন্ময় ভট্টাচার্য, নেপালদেব ভট্টাচার্য, মৃণাল চক্রবর্তী।
আশ্চর্যজনকভাবে নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে তার প্রথমেই রয়েছে গৌতম দেবের নাম। দু’ নম্বরে রয়েছেন নেপাল দেব ভট্টাচার্য। এই দুই নেতাই অসুস্থ। তালিকার সামনের সারিতে রয়েছেন মানস মুখোপাধ্যায়। যিনি অসুস্থতার কারণে ভোটে লড়াই করতে পারেন না। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেই মধ্যরাতেই বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা সিদ্ধান্ত নেন জেলা সম্পাদক নির্বাচন করা হবে আলিমুদ্দিনে। বিকেলে নবনির্বাচিত জেলা কমিটির সদস্যরা আলিমুদ্দিনে বৈঠকে বসলে সম্পাদকের চেয়ার নিয়ে ভোটাভুটি করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন কমরেডকুলের নেতারা। শীর্ষ নেতাদের হুইপের কাছে মাথা নত করে শেষপর্যন্ত কার্যত বৃদ্ধদের তালিকায় থাকা মৃণাল চক্রবর্তীকেই ফের জেলা সম্পাদক মেনে নিতে বাধ্য হন।
আজ থেকেই আবার আরেক অশান্তির পথে সিপিএম। সূর্যকান্ত মিশ্র পরবর্তী রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব কে পাবেন সেই বিতর্কে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া রাজ্যের সম্মেলনে ঝড় ওঠার আভাস মিলেছে। হাওড়ার নেতা শ্রীদীপ ভট্টাচার্যকে পরবর্তী সম্পাদক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আলিমুদ্দিন। কিন্তু তাতে অখুশি পার্টির লিচুতলা। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে টীকাটিপ্পনী। আলিমুদ্দিনের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে গুঞ্জন।
কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পার্টি। এই অবস্থায় একজন তাত্ত্বিক নেতাকে দিয়ে কিভাবে পার্টিকে রাস্তায় রাখা যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজ্য সম্মেলনেও যে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফলে রাজ্য সম্মেলনে আরেক অশান্তি শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়াও বয়সের কারণে জেলা কমিটি থেকে বাদ যাবেন প্রায় একডজন সদস্য। তাঁদের জায়গায় কারা ঢুকবেন তা নিয়েও অশান্তির মেঘ জমেছে আলিমুদ্দিনের আকাশে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.