বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: তৃণমূল সরকারের বিপুল জয়ের পিছনে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) মস্তিষ্কপ্রসূত ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির ভূমিকা রয়েছে। সেই সঙ্গে বিজেপির আগ্রাসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া আতঙ্ক তৃণমূলকে বিপুল জয় এনে দিয়েছে বলে মনে করছে কংগ্রেস। মোদিকে আটকাতে পারে দিদি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মনে তৈরি হওয়া এই ধারণা থেকেই মোর্চার ভোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পেয়েছেন বলে মনে করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury)। তবে, ভোটে ভরাডুবি হলেও এখনই বামেদের সঙ্গে জোট ভেঙে দেওয়ার সময় আসেনি বলে জানান তিনি। রাজ্য সরকার কেন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে নালিশ করছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রদেশ সভাপতি।
হাইকম্যান্ড নিযুক্ত পর্যালোচনা কমিটির রিপোর্ট জমা পরার পর এদিন বৈঠকে বসে প্রদেশ কংগ্রেস (Pradesh Congress)। অধিকাংশ প্রবীণ নেতৃত্ব বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরমধ্যেও বামেদের সঙ্গে জোট রাখার প্রশ্নে কার্যত বৈঠক পরিণত হয় মেছো হাটে। দলের একাংশের দাবি আলিমুদ্দিনের সঙ্গে জোট করে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে। বহু জায়গাতেই বাম ভোটারদের কাছে জোট গ্রহণযোগ্য হয়নি। ফলে সেই ভোটাররা জোট শরিকদের ভোট না দিয়ে তৃণমূলকে সরকার গড়তে সাহায্য করেছে। ২০১৬’র ভোটে অনেক জায়গাতেই কংগ্রেস সমর্থকরা যেহেতু বামেদের ভোট দেয়নি, তাই এবার প্রতিশোধ নিতেই তৃণমূলকে (TMC) ভোট দিয়েছে বলে জোট বিরোধীরা ব্যাখ্যা দেয়।
পালটা জোট টিকিয়ে রাখার পক্ষে দলের সংখ্যাগুরু অংশ মত দেয় বলে বিধানভবন সূত্রে খবর। তাঁদের ব্যাখ্যা, ২০১৬ সালের বিধানসভায় জোট করে যখন কংগ্রেস প্রধান বিরোধীদলের মর্যাদা পায় তখন কেউই জোট ভেঙে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেনি। তাছাড়া গত লোকসভায় জোট না করেও দলের ফল ভাল হয়নি। আর ২০২১ বিধানসভাতেও হয়নি। তাহলে এখন কেন দল আগ বাড়িয়ে জোট ভাঙতে যাবে? বারবার শিবির বদল করলে কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে বলে মনে করেন জোটপন্থীরা। এই ইস্যুতে জোটপন্থীদের পাশেই দাঁড়ান প্রদেশ সভাপতি। তিনি জানান, বামেদের সঙ্গে জোট করার ফলেই ভরাডুবি হয়েছে, এমন কোনও বাস্তব তথ্যপ্রমাণ নেই। তাই এখনই চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সঠিক হবে না বলে আপাতত বিতর্ক ধামাচাপা দেন। বৈঠকের মাঝেই মোর্চা নিয়ে নিজের মতামত জানিয়ে দেন অধীর চৌধুরী। তিনি মনে করেন, যেহেতু নির্বাচনের জন্য বামেদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল কংগ্রেস তাই এখনই জোট ভেঙে গিয়েছে বা অটুট রয়েছে এমনটা স্পষ্ট করে বলা যাবে না।
এদিকে জোট ধরে রাখার পক্ষে সওয়াল করেছে সিপিএম রাজ্য কমিটিও। তাঁদের পর্যালোচনা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সাংগাঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে ভরাডুবি রোখা যাবে না। পশ্চিম বর্ধমান ও কলকাতা ছাড়া বাকি সব জেলাই জোট টিকিয়ে রাখার পক্ষে মতামত দেয় বলে আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থাকবে কিনা তা ভবিষ্যত বলবে। তার আগে আগামীদিন রাজ্যের উপনির্বাচন ও পুর ভোটের প্রস্তুতি সেরে রাখার নির্দেশ দিল আলিমুদ্দিন। বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ছাড়াও ছিলেন প্রকাশ কারাট, মানিক সরকার সহ সাত পলিব্যুরোর সদস্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.