রাহুল চক্রবর্তী: রাজ্যের তফসিলি জাতি, উপজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়নের স্বার্থে এই প্রথম আলাদাভাবে এই শ্রেণির বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে মুখ্যমন্ত্রীর এই আহ্বান এড়াতে পারলেন না বিজেপি বিধায়করাও৷ তাই জেলার প্রশাসনিক বৈঠকগুলিতে বিরোধী বিধায়করা ডাক পান না এই অভিযোগ উঠলেও, এদিন তার জবাব মিলল৷
মঙ্গলবার বিধানসভার নৌশের আলি কক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন সুখবিলাস বর্মা, নেপাল মাহাতো, শংকর মালাকার, মনোজ টিগ্গা, স্বাধীন সরকার, জোয়েল মুর্মু-সহ রাজ্যের তফসিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণির বিধায়করা৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এই দপ্তরের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সরকারি আধিকারিকরা৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে বিধায়কদের প্রস্তাবগুলি শুনতে চান৷ তাতে প্রত্যেকেই তফসিলি জাতি ও উপজাতির উন্নয়নের স্বার্থে নিজেদের প্রস্তাব রাখেন৷ উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ সরকারি আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, সেসব খাতায় নোট করতে৷
মনোজ টিগ্গা, শংকর মালাকার যৌথভাবে প্রস্তাব রাখেন, চা শ্রমিকদের উন্নয়নে আরেকটু নজর দিতে৷ তাঁদের জমির অধিকার, অবসরপ্রাপ্ত চা শ্রমিকদের ভবিষ্যতের জন্য অন্তত ৫ বিঘা জমিপ্রদান-সহ একাধিক সুবিধা দেওয়ার কথা বলেন বিধায়করা৷ এছাড়া বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তপশিলি জাতি ও উপজাতির মানুষজনকে সার্টিফিকেট পেতে বেশ হয়রান হতে হচ্ছে৷ তাই সার্টিফিকেট প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি সরলীকরণ করা দরকার বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে উল্লেখ করেছেন শাসকদলের বিধায়করাই৷ এই কথা শুনেই মুখ্যমন্ত্র স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জন্মসূত্রে তফসিলি জাতি ও উপজাতি ব্যক্তিদের আবেদনের ৪ সপ্তাহের মধ্যেই সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে হবে৷ এর অন্যথা হলে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানিয়েছেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷
এছাড়া আদিবাসীদের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে বিভিন্নভাবে, এই অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা হয়৷ পেনশনভাতা বৃদ্ধির দাবিও ওঠে এই বৈঠকে৷ অনেক সময় অভিযোগ শোনা গিয়েছে, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য নির্দিষ্ট তহবিল অন্য খাতে খরচ হয়ে যায়৷ তা যাতে রোধ করা যায়, সেবিষয়ে মুখমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিধায়করা৷
উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের পিছিয়ে পড়া মানুষজনের সমস্যা পৃথক৷ তাই বিধায়কদের আরজি, এলাকার ভিত্তিতে সমস্যাগুলি আলাদাভাবে চিহ্নিত করে সমাধানে উদ্যোগী হোক সরকার৷ সূত্রের খবর, এই প্রসঙ্গে আলোচনার সময়ে মনোজ টিগ্গা এবং সুখবিলাস বর্মার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর একটু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে৷ তবে পরে সবটা বুঝতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী তা মন দিয়ে শুনেছেন৷ তফসিলি জাতি ও উপজাতি দপ্তরের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্য সরকার যে ভালভাবে এসব কাজ করছে, তার প্রমাণ এদিনই কেন্দ্রের তরফে স্বীকৃতি মিলেছে৷তবে লোকসভা ভোটের পর রাজ্যের মূল বিরোধী দল বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই বৈঠকে সুফল মিলবে বলেই আশা সংশ্লিষ্ট মহলের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.