ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: আজীবন জ্বলবে প্রতিবাদের প্রতীক। এনআরসি (NRC), সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) এবং এনপিআরের প্রতিবাদে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে যে ছবিগুলি আঁকা হয়েছে, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলির একটিও বিক্রি করা হবে না। প্রথমে তাদের বিশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তারপর কোনওটি চলে যাবে সরকারি কোনও দপ্তরে। কোনওটি জায়গা করে নেবে বেসরকারি কারও সংগ্রহে। সবটাই দান করে দেওয়া হবে। শর্ত একটিই। যথাযোগ্য মর্যাদায় তাদের রাখতে হবে।
এনআরসি নিয়ে আন্দোলন শুরুর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে প্রতিবাদের প্রতীকস্বরূপ রাজপথে নেমে ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কলকাতার সমস্ত তাবড় শিল্পী। ৩৬-৩৬ ইঞ্চি মাপের কমবেশি ৪০টি ছবি সেদিন আঁকা হয়। নিঃসন্দেহে সেসব দুর্মূল্য। কে নেই শিল্পীদের সেই তালিকায়। শুভাপ্রসন্ন, যোগেন চৌধুরি, মনোজ মিত্র, সৌমিত্র কর, প্রদোষ পাল, অভিজিৎ মিত্র, মহুয়া মিত্র, বিভূতি চক্রবর্তী, বিশ্ব বসু, মীনাক্ষী রায়, ভবতোষ সুতার, মল্লিকা দাস সুতারের মতো সব শিল্পী। রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবিটিও।
একবার রাষ্ট্রপতি ভবনে থেকে সেখানে বেশ কিছু ছবি আঁকার জন্য তলব পড়েছিল যোগেনবাবুর। স্বভাবতই প্রত্যেকের কাজ অমূল্য। মূল্যের হিসাবে বিচার করলে সেসব কাজের দাম ওঠে পঞ্চাশ হাজার থেকে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত। কোনওটি ছোঁয় কোটির ঘরও। শিল্পীমহল তাই বলছে, এমন শিল্পের কোনও মূল্য হয় না। দাম ধরলে অনেক। না ধরলে কিছুই না। যাঁরা কদর বোঝেন। তাঁরাই এর সঠিক মূল্যায়ণ করতে পারেন। তাতে বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি হওয়া এমন সব ছবি এবং তাদের একসঙ্গে দেখতে পাওয়ার মূল্য টাকায় বিচার করা যায় না। সেগুলি সত্যিই অমূল্য।
সেই সব ক’টি ছবিকেই একসঙ্গে করে কলকাতায় বড় করে প্রদর্শনীর কাজ শুরু হবে। তারপর সেই প্রদর্শনী যাবে রাজধানীর বুকে। তুলে ধরা হবে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে। তারপরই সেগুলির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে। সেগুলি যেহেতু একটি সামাজিক কারণে তৈরি হয়েছে, প্রতিবাদের প্রতীকস্বরূপ সেই ছবিগুলিকে কেউ যদি নিতে চান, বিশেষ মর্যাদা দিয়ে তুলে দেওয়া হবে তাঁদের হাতে। তবে তাঁকে শিল্পের কদর বুঝতে হবে। আয়োজক প্রথিতযশা শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যর কথায়, “সকলেই তো সুনামী চিত্রি। তাঁদের আঁকা এই ছবিগুলি কখনওই বিক্রি করা হবে না। সে চেষ্টাও নেই। পরিকল্পনাও নেই। ভাবনাও কখনও হয়নি। সেই প্রত্যাশা নিয়ে এই কাজ করা হয়নি। যে যাঁর মতো কাজ করেছি। এখানে কোনও অর্থনীতির ব্যাপার নেই। নামী চিত্রশিল্পীরা তাঁদের এমন সব ছবি দান করেছেন। যাঁরা যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে নিতে পারবেন, নেবেন।”
নিজের ছবি আঁকা দ্রুত শেষ করে সেদিন প্রতিবাদে আরও একবার সরব হয়েছিলেন মমতা। পরে নবান্নে ফিরে সকলের কাজের খবর নেন। সবকটি ছবিই তিনি দেখেছেন। শুভাপ্রসন্নবাবুর কথায়, “মমতা ভীষণ খুশি। সব ক’টি ছবি দেখেছেন। এত কাজের মধ্যেও ওঁর সবদিকে চোখ। ওঁর সবচেয়ে ভাল লেগেছে যে, এভাবে এত সুন্দর একটা কাজ এত অল্প সময়ে হল।” এত দুর্মূল্য সব ছবি একসঙ্গে একটি জায়গায় যাতে রাজ্যবাসীর সামনে তুলে ধরা যায়, এমন জায়গার খোঁজ চলছে। সঙ্গে দিল্লিতেও চেষ্টা চলছে ললিতকলা অ্যাকাডেমি বা মধ্য দিল্লির কোথাও বড় করে ছবিগুলির প্রদর্শনীর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.