বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: আসন সংখ্যায় চতুর্থ। ঝুলিতে একটি পুরসভা। প্রাপ্ত ভোটের শতাংশের হারে দ্বিতীয়। তাতেই খুশি বামেরা। কারণ শেষবেলায় ডাক্তারবাবুর হাত ধরেই সংগঠনে বন্ধ হয়েছে রক্তক্ষরণ। পরপর তিনটি পুরভোটে দ্বিতীয় স্থানে থাকায় রাজ্য রাজনীতিতে বিরোধী পরিসর দখলে আসছে বলেই মনে করছে বামেরা। আর তাতেই খুশির হাওয়া। অন্যদিকে, প্রাপ্ত আসনের নিরিখে বামেদের থেকে বেশি হয়েও নিরাশ কংগ্রেস। কারণ সেনাপতির গড়ে ধস। বহরমপুরে পর্যুদস্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রতি ভোটেই বামেদের (Left Front) জনসমর্থনের গ্রাফ ছিল নিম্নমুখী। সংগঠনে রক্তক্ষরণ অবধারিত ছিল। চিকিৎসক সূর্যকান্ত মিশ্রর হাতে রোগ নিরাময়ের দায়িত্ব দিয় রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যাচ্ছিল না। গত বিধানসভা ভোটে বামেদের চরম অধঃপতন হয়। শতাংশের নিরিখে প্রাপ্ত ভোট নেমে আসে পাঁচ শতাংশে। আসন সংখ্যা হয় শূন্য। সংগঠনের হাল ফেরাতে মরিয়া হন কমরেডকুলের নেতারা। পক্বকেশী নেতাদের চেয়ার কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি সংগঠনে তাজা রক্তের সঞ্চার ঘটনোর সিদ্ধান্ত নেয় আলিমুদ্দিনের ভোট ম্যানেজাররা। করোনাকালে (Coronavirus) রাস্তায় নামানো হয় ‘রেড ভলেন্টিয়ার’দের। মহল্লায় মহল্লায় তৈরি হয় শ্রমজীবী ক্যান্টিন। বদলানো হয় প্রার্থী তালিকা। পক্বকেশীদের ছুড়ে ফেলে সামনের সারিতে আনা হয় তরুণদের। পার্টির আভ্যন্তরীণ সম্মেলনে তার প্রভাব পড়ে। রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই নেতৃত্বে বদল হয়। সুশান্ত ঘোষের মতো নেতাদের জেলার দায়িত্বে নিয়ে আসা হয়।
একের পর এক পদক্ষেপের ফল এবার মেলা শুরু করেছে। কলকাতার পর চারটি পুরনিগম। পরপর দু’টি ভোটে গেরুয়া শিবিরকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয়স্থান দখল করে বামেরা। তারপর এই ১০৮ পুরসভায় রাজ্যে বিরোধী পরিসর দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে লাল শিবির। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলকে টলাতে না পারলেও বিজেপির থেকে ভোট শতাংশের বিচারে কিছুটা হলেও এগিয়ে গিয়েছে বামেরা। ১০৮ টি পুরসভায় ৫৫ আসন পেয়েছে বামেরা। বিজেপি যেখানে ১৩ শতাংশ মানুষের সমর্থন পেয়েছে সেখানে এক শতাংশ বেশি মানুষের ভোট পেয়েছে বামেরা। পরপর তিনটি ভোটে গেরুয়া শিবিরকে পেছনে ফেলে বিরোধী পরিসর দখল করতে পারায় খুশির হাওয়া বাম শিবিরে। সিপিএম (CPIM) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “জানাই ছিল তৃণমূলের বিরোধী একমাত্র বামেরা। মানুষ বুঝতে পারছে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত এই সরকারকে হঠাতে পারি আমরাই।” ব্যাপক ছাপ্পা ও রিগিং না হলে ফল আরও ভালো হতো। আগামী দিনে মানুষের সমর্থন আরও বাড়বে বলে দাবি করেন তিনি।”
পরপর তিনটি পুরভোটে বামেরা জনসমর্থন বাড়াতে পারলেও সেই তিমিরেই কংগ্রেস (Congress)। বরং অধীর গড় বলে পরিচিত বহরমপুর পুরসভা কংগ্রেসের হাতছাড়া হওয়ায় হতাশ বিধানভবন। তবে আশার আলো একটাই। প্রাপ্ত আসনের বিচারে বামেদের পেছনে ফেলতে পেরেছে কংগ্রেস। কিন্তু বড় ধাক্কা অবশ্যই বহরমপুর হাতছাড়া হওয়ায়। তবে বহরমপুর এর হারকে পরাজয় মানতে নারাজ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury)। নিরপেক্ষ ভোট হলে ২৮ টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি কংগ্রেস জিতবে বলে দাবি করেন তিনি। না হলে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। যদিও প্রদেশ সভাপতির দাবি মানতে নারাজ তাঁর বিরোধী শিবির। অধীরের জন্যই দল ডুকছে বলে অভিযোগ। প্রদেশ সভাপতি মুর্শিদাবাদকেন্দ্রিক রাজনীতি করছেন। তাই বামেদের ভোট বাড়লেও কংগ্রেস সেই তিমিরেই থেকে যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.