তরুণকান্তি দাস: ‘তও নি দে পেও’। দুর্বোধ্য ভাষা! উচ্চারণেও বাঙালিয়ানার লেশমাত্র নেই। অন্তত আমবাঙালির কাছে। মহানগরের মানুষও খুব বোঝেন, তেমনটা নয়। এমনকী যাঁরা এ পাড়ায় তাঁদের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে প্রায় শতবর্ষ পার করে ফেললেন, তাঁরাও এই ভাষা বলা দূরের কথা, সবটা বোঝেন না। তবু তাঁরা দেওয়াল লিখছেন, নিজেদের মাতৃভাষায়। সেখানে ফুটে উঠেছে রাজনৈতিক সচেতনতা। তাঁরা আবেদন জানাচ্ছেন, ‘ভোট দিন’। ‘তও নি দে পেও’।
কলকাতার যেখানে গেলে এই অচেনা ভাষায় দেওয়াল লিখন চোখে পড়বে, সেটা চায়না টাউন (China Town)। পূর্ব কলকাতার বাইপাসের অদূরে এই পাড়ার যতটুকু নাম ও হাঁকডাক তা একেবারে ঐতিহ্যবাহী চিনা খাবারের জন্য। চিলি চিকেন ও ফ্রায়েড রাইস, যা আমবাঙালির অতি প্রিয়। চাইনিজের চেয়েও যা বেশি করে বাঙালি রসনাতৃপ্তিতে স্থান করে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার সেই চায়না টাউনে দেওয়াল লিখনে ভোটপ্রচারে নামলেন বাসিন্দারা। সঙ্গে কসবার তৃণমূল প্রার্থী জাভেদ আহমেদ খান।
চায়না টাউনের বাসিন্দা জোসেফ চ্যান বলেন, “আমরা যে রাজনীতি সচেতন তা সবাই জানেন। ভোটের সময় এই দেওয়াল লিখন তারই অঙ্গ।” চিনে এখনও বামপন্থার জয়জয়কার। তবে এখানে তৃণমূলের হয়ে রং-তুলি হাতে তুলে নিলেন যে? জোসেফের উত্তর, “আমরা এই সরকারে বিশ্বাস রাখি। ভরসা রাখি।” বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা তিনি শিবরাত্রির অনুষ্ঠান পালনে মন্দিরে গিয়েছেন। “বাঙালির প্রতিটি উৎসবে আমরা মেতে উঠি,” বলেন তিনি।
চায়না টাউনে প্রায় আড়াই হাজার চিনে নাগরিকের বসবাস। বিকেলে সেখানকার ক্লাব হাউসে বসে মাইকেল নামে এক বাসিন্দা বলছেন, “আসলে আমরা এই শহরকে ভালবাসি। এখানে অত্যন্ত নিশ্চয়তার সঙ্গে বাস করতে পারি। করোনা চিন থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে, এমন অপপ্রচারের আবহেও কলকাতা আমাদের কখনও ব্রাত্য করেনি। এই শহর ভালবাসতে জানে। তাই আমরা সবাই ভোট দিই। ভোট দিতে বলি।”একসময় এখানকারই এক বাসিন্দা পুরভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। এখনও সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেক যুবক। সেখানে ভোট পেতে নেমে পড়েছে সব দল। তারই ছবি দেখা গেল বৃহস্পতিবার। দেওয়ালে ফুটে উঠল ‘তও নি দে পেও’। ভোট দিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.