নিজস্ব চিত্র।
নব্যেন্দু হাজরা: রাত পোহালেই গঙ্গার তলা দিয়ে যাত্রী নিয়ে ছুটবে মেট্রো। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হবে সাধারণ মানুষের। তার আগে হাওড়া ময়দান- এসপ্ল্যানেড (Howrah-Esplanade Metro) মেট্রোর প্রত্যেক স্টেশনে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। একেবারে সাজ সাজ রব। কিন্তু শুক্রবার মেট্রোয় চড়তে গিয়ে প্ল্যাটফর্ম বা লিফটে লেখা বাংলা ভাষার বহর দেখলে আপনি রীতিমতো ভিরমি খেতে পারেন। জেলা থেকে আসা মানুষজনের পক্ষে তো বোঝা দায় হতে পারে।
পরিষেবা শুরুর আগেই এই স্টেশনে ঢুকে লিফটে লেখা বাংলা দেখে পিলে চমকানোর জোগাড়। স্টেশনে ঢুকে প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার মাঝে সংযোগকারী জায়গাকে বলা হয় কনকোর্স এলাকা। এখান দিয়ে যাত্রীরা টিকিট কাউন্টারের দিকে যান। আবার প্ল্যাটফর্মে নামেন বা ওঠেন। এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনের লিফটের ভিতরে এই ‘আপার কনকোর্স’ এলাকাকে বাংলায় লেখা হয়েছে ‘উচ্চ মোড়া’, মেজেনাইন ফ্লোরকে বাংলায় লেখা ‘মাঝে তলা’। যাকে সাধারণত মধ্যবর্তী তলা বলা হয়। ‘‘এ ধরনের বাংলা দেখলে যে কোনও মানুষই চমকে উঠবেন’’–বলছে মেট্রো আধিকারিকদেরই একাংশ।
তবে এ ঘটনা যে মেট্রোরেলে এই প্রথম, তেমনটা নয়। এর আগেও হিন্দি, ইংরেজিতে স্টেশনের নাম লেখা থাকলেও বাংলা ভাষাকে সেখানে ব্রাত্য রাখার অভিযোগ উঠেছিল। অথচ এটা বাংলার মাটি। পরিষেবা গ্রহণকারীদের সিংহভাগের ভাষাই বাংলা। শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশন যখন উদ্বোধন হয়, সেই সময়ও দেখা গিয়েছিল, স্টেশনে লেখা বানানে বিস্তর ভুল। অনেকক্ষেত্রে বিভ্রান্তিও। খবর প্রকাশের পর তা ঠিক করা হয়। শুরুতে সেখানে সল্টলেক স্টেডিয়াম হয়ে গিয়েছিল ‘সল্ট লেক স্টেডিয়ায’। ‘স্টেশন’ শব্দটি হয়েছে ‘স্টেশান।’ ‘প্ল্যাটফর্ম’ হয়ে গিয়েছিল ‘প্যাটফর্ম’, ট্রেনের ছাদে উঠবেন না বোঝাতে গিয়ে লেখা হয়েছিল ট্রেনের ‘ছাতে’ উঠবেন না। ‘ব্যক্তি’ বানান লেখা হয়েছে ‘ব্যাক্তি। পরে অবশ্য সব বানান ঠিক করা হয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, এগুলো কি নিছকই চোখ এড়িয়ে যাওয়া? না কি গাফিলতি ও অবহেলার চরম নিদর্শন?
জাতীয় বাংলার পরিষদের সভাপতি চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘কোনও ইংরেজি শব্দের যদি ঠিকঠাক বাংলা প্রতিশব্দ না থাকে সেখানে ইংরেজি রাখাই ভালো। বাংলা ভাষাকে ধ্বংস করা হচ্ছে এভাবে। বিষয়টা হাস্যকর হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী সরকার। বাংলা ভাষাকে সম্মান না দেওয়া ওদের অভ্যাস।’’ মেট্রোর রেলের আধিকারিকদের একাংশ জানান, আসলে ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে তড়িঘড়ি উদ্বোধন করাতে বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন এখানকার কর্তারা। যে কারণে উদ্বোধনের দিনও কেউ জানতেন না, কবে থেকে যাত্রী পরিষেবা শুরু হবে। অবশেষে উদ্বোধনের ন’দিন পর যাত্রী নিয়ে গঙ্গার নিচ দিয়ে ছুটবে মেট্রো। শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে পরিষেবা। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে হাওড়া ময়দান এবং এসপ্ল্যানেড দুই প্রান্ত থেকে শেষ মেট্রো ছুটবে। একইসঙ্গে নিউ গড়িয়া-রুবি এবং জোকা-মাঝেরহাটের মধ্যে যাত্রী পরিষেবাও শুরু হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.