সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সবাই দেশের নাগরিক। কারও দয়ায় এদেশে বাস করি না। সংশোধিত নাগরকিত্ব আইনের (CAA) প্রতিবাদে রানি রাসমনির সভা থেকে এভাবেই আন্দোলনের সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, তৃণমূলের আন্দোলন স্রেফ রাজনৈতিক আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ নেই, মানুষের আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছে। বললেন, বিজেপি ঔদ্ধত্যের জবাব পাবে মানুষের স্বতস্ফূর্ত বিরোধিতায়।
বিজেপি বিরোধী যে কোনও প্রতিবাদে এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে সামনে সারিতে, তা এরাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। দলীয় সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সেই আন্দোলনের তীব্রতা এতটাই যে অন্যান্য বিরোধী দলগুলিও তাতে শামিল হয়। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনও এই মুহূর্তে জাতীয় স্তরে সর্বাধিক আলোচিত বিষয়। যার প্রতিবাদ চলছে দেশজুড়ে। এতেও সবচেয়ে জোরাল প্রতিবাদে শামিল তৃণমূল। শান্তিপূর্ণ পথে মিছিল, মিটিং, সভা, সমাবেশের মাধ্যমে লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচি রাজ্যের শাসকদলের। গত তিনদিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পথে নেমে CAA বিরোধী মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রতিবাদ জারি রাখার দায়িত্ব তিনি বণ্টন করে দিয়েছেন দলের সর্বস্তরের নেতাদের মধ্যে। সেইমতো আজ রানি রাসমনিতে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করার দায়িত্ব ছিল মূলত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর।
নির্ধারিত সময়ে সভা শুরু হয়। যোগ দেন দলের শীর্ষস্তরের বেশ কয়েকজন নেতানেত্রী। বক্তব্য রাখেন দলের শীর্ষ নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এরপর বক্তব্য রাখতে ওঠেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ”শুধু গত মাস বা গত সপ্তাহ থেকেই নয়, যেদিন থেকে দেশজুড়ে এনআরসি করার ইঙ্গিত দিয়েছে কেন্দ্র, সেদিন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোরদার বিরোধিতায় নেমেছেন। বারবার সংকল্প নিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলায় এনআরসি করতে দেব না। আর আজ তাঁর সেই আন্দোলনকে মান্যতা দিয়ে অন্যান্য বিরোধী দলগুলিও এগিয়ে এসেছেন মোদি-শাহ বিরোধিতায়। এই আন্দোলন হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের আন্দোলন।” অসমে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম এনআরসি থেকে বাদ যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, ”অবৈধভাবে এতজন মানুষকে বাদ দিয়েছেন। সাহস থাকলে অসম, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীরা ইস্তফা দিন। ক্ষমতা থাকলে বাংলা থেকে একজন মানুষকেও বাদ দিয়ে দেখান, আমরা বুঝে নেব।”
তবে রানি রাসমনির সমাবেশে শেষ মুহূর্তের পরিবেশ খানিকটা বদলে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি। প্রথমে কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে একত্রে ‘আমরা সবাই নাগরিক’ স্লোগান তোলার পর তিনি নিজে ব্ল্যাকবোর্ডে ‘নাগরিক সবাই’ লিখে তার নিচে চোখে ছবি এঁকে দেন। এরপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ”মনে রাখবেন, আমরা সবাই স্বাধীন দেশের নাগরিক। কারও দয়ায় এদেশের বসবাস করি না। সব মহল থেকে CAA প্রতিবাদ চলছে, চলবে। এটা বাতিল করতেই হবে। স্বাধীনতার ৭৩ বছর পর সবাইকে প্রমাণ করতে হবে যে সে নাগরিক?” এ নিয়ে তিনি একটি কবিতাও লিখেছেন – ‘নাগরিক’ নামে।
এদিন বেঙ্গালুরুতে CAA বিরোধী মিছিলের পর সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় পুলিশের হাতে আটক হন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরবর্তীতে এই প্রতিবাদ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এ রাজ্যেের বিশিষ্টদের সই সংগ্রহে নেমেছে তৃণমূল। শঙ্খ ঘোষ থেকে শ্রীজাত, কবীর সুমন থেকে প্রতুল মুখোপাধ্যায় – সকলেই সই করেছেন তাতে। স্বাক্ষর রয়েছে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, শাঁওলি মিত্র, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, আবুল বাশারের মতো ব্যক্তিত্বদেরও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.