দীপঙ্কর মণ্ডল: দেশের সমস্ত রাজ্যকে পিছনে ফেলে ফের শীর্ষে উঠে এল বাংলা। সরকারি নথির হিসাবে, বাংলা থেকে রাজ্যসভায় যাওয়া সদস্যরাই এলাকার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করেছেন। বৃহস্পতিবার কলকাতায় সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উঠে এল এই তথ্য। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভার সাংসদরা এমপি ল্যাডের ১০১.২৫ শতাংশ টাকা এলাকা উন্নয়নে ব্যয় করেছেন। এমপি ল্যাড প্রকল্পে বছরে পাঁচ কোটি করে টাকা বরাদ্দ হয়। তা বাড়িয়ে প্রত্যেকের জন্য ১০ কোটির দাবি করলেন তৃণমূল সাংসদরা। যদিও কমিটির শীর্ষ পদাধিকারী রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিং এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
[রথযাত্রার প্রস্তুতি দেখতে শহরে অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ দুই নেতা]
যদিও পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভায় যাওয়া সাংসদরা তুলনায় কিছুটা কম খরচ করেছেন। প্রায় ৯০ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে তাঁদের। তবে সাধারণ মানুষের উন্নয়নে এমন উন্নত মানের কাজ অন্য কোনও রাজ্যে হয়নি। এদিন একথা স্বীকার করেছে এমপি ল্যাড সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। বৃহস্পতিবার বাইপাসের একটি তারকা হোটেলে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও সিকিমের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে আলোচনা হয়। সংসদীয় কমিটির ১৩ জনের মধ্যে চেয়ারম্যান-সহ ৬ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডা. শান্তনু সেন। আমন্ত্রণ করা হয়েছিল, সাংসদ ডা. মানস ভুঁইয়া ও তাঁর সতীর্থ আহমেদ হাসান ইমরান, নাদিমুল হক, প্রদীপ ভট্টাচার্য ও রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে। ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে ছিলেন। বাংলার পাঁচ, ত্রিপুরার দুই ও সিকিমের একজন জেলাশাসক। বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, উন্নয়নের কাজে রাজ্য সরকার পূর্ণ সহযোগিতা করছে না। সরাসরি এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে মানসবাবুরা বলেন, এই অভিযোগ সঠিক নয়। এমপি ল্যাডের একটাকাও পড়ে থাকুক তা চান না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
উন্নয়ন খাতে প্রত্যেক সাংসদের জন্য ১৯৯৩-তে বার্ষিক পাঁচ কোটি টাকা ধার্য হয়েছিল। সেই কোটাই এখনও বরাদ্দ। তৃণমূল সাংসদরা একযোগে দাবি করেন, টাকার পরিমাণ দ্বিগুন করে বছরে দশ কোটি করা হোক। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে (এনজিও) টাকা দিতে গেলে ৫০ লক্ষের বেশি দেওয়া যায় না। এই নিয়মের বিরোধিতা করে তৃণমূল সাংসদরা দাবি করেন, এনজিও-র জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ বাড়িয়ে এককোটি করা হোক। শবদেহ বহনকারী গাড়ি এবং অ্যাম্বুল্যান্স দিতে পারেন না সাংসদরা। মানসবাবু এই প্রসঙ্গ তুলে সংসদীয় কমিটিকে বলেন, ভারতবর্ষের মতো দেশে যেখানে ১৩০ কোটি মানুষের বাস, সাড়ে ছয় লক্ষ গ্রাম আছে সেখানে এই নিষেধাজ্ঞা ঠিক নয়। নিয়ম বদলে অ্যাম্বুল্যান্স ও শবদেহ বহনের গাড়ি দেওয়ার অনুমতি চেয়েছেন তিনি। রাজ্যসভার সদস্যরা এই ধরনের বৈঠকে দলের পরিচয় দিতে পারেন না। কিন্তু সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এদিন রূপা নিজেকে ‘বিজেপির অ্যাক্টিভিস্ট’ বলে নিজের পরিচয় দেন। এই আত্মপরিচয়ের প্রতিবাদ করেন শান্তনু।
[বহুতল থেকে শিশুকে নিয়ে ঝাঁপ মা-দিদার, তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য]
এমপি ল্যাড প্রকল্পে (এলাকা উন্নয়নে সাংসদ তহবিল) রাজ্যের আয়লা কবলিত এলাকায় কেমন কাজ হয়েছে তা ঘুরে দেখার কথা ছিল সংসদীয় কমিটির। তবে কমিটির সদস্যরা ওই এলাকায় যেতে পারেননি। তাঁরা দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে যৌনকর্মীদের প্রকল্প, বিধাননগরে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে পানীয় জলের প্রকল্প-সহ মোট তিন জায়গায় যান। রাজ্যের কাজ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন কমিটির সদস্যরা। রাজ্যের তরফে এদিন বাঁকুড়ার ডোকরার ঘোড়া ও গীতাঞ্জলি উপহার দেওয়া হয় কমিটি সদস্যদের। শুক্রবার সংসদীয় কমিটির মিজোরাম যাওয়ার কথা। বুধবার কমিটির সদস্যরা কালীঘাটে পুজো দেন। নবান্ন থেকে তাঁদের জন্য ‘স্পেশাল পুজো’র দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ‘রসগোল্লা দিবস’-এ তাঁদের একটি বিশেষ সংস্থার তৈরি রসগোল্লা উপহার দেওয়া হয়েছে। বাইপাস সংলগ্ন পাঁচতারা হোটেলে বৈঠক শেষে রাজ্যের উন্নয়নের কাজের ভূয়সি প্রশংসা করে সংসদীয় কমিটি।
সাংসদদের টাকা খরচের নিরিখে কেন্দ্রশাসিত এলাকা পুদুচেরি শীর্ষে। তারপর আছে দিল্লি। রাজ্যওয়ারি হিসাব বলছে, পশ্চিমবঙ্গ সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে এই হিসাব তৃণমূলকে বাড়তি অক্সিজেন দেবে। উন্নয়নের কাজ নিয়ে এ রাজ্যের বিরোধীরা মাঝেমধ্যে প্রশ্ন তোলেন। সংসদীয় কমিটির পরিসংখ্যান বলছে, এবার সবার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী লোকসভা ভোটে তৃণমূল এই পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করবে। এমপি ল্যাড সংক্রান্ত রিপোর্ট বলছে, এ রাজ্যের তৃণমূল সাংসদদের একটি বড় অংশ বরাদ্দ টাকার চেয়ে অনেক বেশি খরচ করেছেন। সাধারণত এই ধরনের ‘হাই প্রোফাইল’ বৈঠক নবান্ন সভাঘরে হয়। রাজ্যের বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী সংসদীয় কমিটির বৈঠক পাঁচতারা হোটেলে হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, লোকসভার প্রয়াত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এই বিষয়ে বারবার নিষেধ করতেন। এই ধরনের বৈঠক হোটেলে হওয়া ঠিক নয়।” নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংসদীয় কমিটির সদস্যরা বাইপাসের ওই পাঁচতারা হোটেলেই ছিলেন। তাঁদের ইচ্ছাতেই সরকারি কনফারেন্স হলের পরিবর্তে হোটেলে বৈঠক হয়। কমিটির থাকা-খাওয়া-সহ যাবতীয় খরচ বহন করেছে কেন্দ্র। এই কারণে বৈঠকের স্থান নিয়ে আপত্তি জানায়নি রাজ্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.