দীপঙ্কর মণ্ডল: বঙ্গ সফরে এসে অমিত শাহ সোনার বাংলা গড়ার ডাক দিয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হলেই তা সম্ভব বলেই জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যবাসীকে তাঁদের বিপুল ভোটে জয়ী করানোর আরজিও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যার বিরোধিতায় ইতিমধ্যেই সুর চওড়া করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সাংবাদিক বৈঠকে সোনার বাংলা গড়ার ডাক দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)। ফের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একহাতও নিলেন তিনি। রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আরও একবার তুললেন প্রশ্ন।
রাজ্যপালের অভিযোগ, “দেশ এক পথে চলছে, বাংলা অন্য পথে। রাজনৈতিক সংঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। সাংবিধানিক সংঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন। পুলিশ-প্রশাসনের রাজনীতিকরণ হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। জনস্বার্থের বিষয়ে সংঘাত কাম্য নয়।” এ প্রসঙ্গে ডায়মন্ড হারবারের (Diamond Harbour) কথাও তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “ডায়মন্ড হারবার কারো জমিদারি নয়। আমি ওখানে গিয়ে একজন জুনিয়র অফিসারকে ডাকলাম। তিনি এলেন না। গোটা রাজ্যে আইনের শাসন নেই। ডায়মন্ড হারবারে আমার প্রতি প্রশাসনের ভূমিকায় লজ্জায় মাথা ঝুঁকে যাচ্ছে। তবে আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন পরিবর্তন আসছে। ডায়মন্ড হারবারে আমার প্রতি পুলিশের আচরণের তদন্ত হবে। ডায়মন্ড হারবার কি দেশের আইন চলে না? ওখানকার পুলিশ প্রশাসন কি জানেনা যে রাজ্যপালকে গার্ড অব অনার দিতে হয়? গোটা রাজ্য কি ভাগ বাটোয়ারা করে দেওয়া হয়েছে? আমি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিকবার বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের (Police) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল। কখনও টুইট আবার কখনও পত্রবোমার মাধ্যমে নিজের অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন তিনি। তা সত্ত্বেও তাঁর চিঠির কোনও উত্তর কিংবা নিজেদের আচরণে কোনও পরিবর্তন রাজ্য সরকারের হয়নি বলেও দাবি রাজ্যপালের।
রাজ্যের বিজেপি (BJP) নেতা-কর্মীদের ‘খুন’ করা হচ্ছে বলে বারবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে গেরুয়া শিবির। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকেও বিজেপির দাবিকেই যেন খানিকটা সিলমোহর দিলেন রাজ্যপাল। তাঁর দাবি, রাজ্যের বিরোধীদের উপরে আক্রমণ শানানো হচ্ছে। যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী বলেই দাবি তাঁর। এছাড়াও বারবার বহিরাগত ইস্যুতে বিজেপি নেতৃত্বকে কটাক্ষ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শাসক শিবিরের অনেকেই। সেই কটাক্ষকে ভাল চোখে দেখছেন না রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সরাসরি কিছু না বললেও পরোক্ষে তাঁর পালটা জবাব দিয়েছেন রাজ্যপাল। বলেন, “কোন সংজ্ঞায় দেশের নাগরিকরা বহিরাগত? গণতন্ত্রে বিরোধীদের উপর এ ধরনের সংঘাত কাম্য নয়।”
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন (Assembly Election 2021) আদৌ শান্তিপূর্ণ হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। এমনকী কেন্দ্রের আয়ুষ্মান প্রকল্প এবং পিএম কিষাণ যোজনার পরিপন্থী হওয়ায় রাজ্যের কৃষক-সহ প্রায় প্রত্যেকে বঞ্চিত বলেও দাবি জগদীপ ধনকড়ের। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের হয়ে কাজ করছেন বলে বারবার অভিযোগ করেছেন শাসকদলের নেতাকর্মীরা। রাজ্যপালের সাংবাদিক বৈঠকের পর সেই অভিযোগই আরও জোরাল হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.