নব্যেন্দু হাজরা: কারও জমি নেই। কেউ জমির সঠিক কাগজপত্র খুঁজে পাচ্ছেন না। কেউ কর্মসূত্রে বাইরে আছেন। কেউ আবার চিকিৎসা করাতে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গিয়েছেন। এমনই নানা কারণে আবাস যোজনায় প্রায় ৫০ হাজার বাড়ির অনুমোদন দিতে পারছে না রাজ্য সরকার। হাতে রয়েছে আর দু’দিন। কেন্দ্রের তরফে অনুমোদনের সময়সীমা বাড়ানোর পরও তা শেষের পথে। কিন্তু নবান্ন সূত্রে খবর, ৫১ হাজার ৬৬৭টি বাড়ির অনুমোদন এখনও বাকি রয়ে গিয়েছে। সেগুলো দু’দিনের মধ্যে দেওয়া কার্যত অসম্ভব। শনিবারও সমস্ত জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেন নবান্নের কর্তারা। সেখানে সমস্ত নিয়ম মেনে যে সংখ্যক বাড়ির অনুমোদন দেওয়া সম্ভব সেই কাজ দ্রুত শেষের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি জেলাকে এবিষয়ে সতর্কও করা হয়েছে।
বাংলায় মোট ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮টি বাড়ির অর্থ বরাদ্দ করার কথা কেন্দ্রের। শুরুতে ঠিক ছিল গতবছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই বাড়ির অনুমোদনের কাজ শেষ করতে হবে রাজ্যকে। কিন্তু দিনকয়েক আগে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে চিঠি দিয়ে সেই সময়সীমা একমাস বাড়ানো হয়। কিন্তু সেঅ সময়সীমাও শেষের দোরগোড়ায়। নবান্নের আধিকারিকদের কথায়, প্রায় ৫২ হাজার বাড়ির অনুমোদন এখনও বাকি। যা এই সময়ে করা অসম্ভব। কিছু সংখ্যক হয়তো হবে কিন্তু বাকিদেরটা নানা জটিলতায় আটকে যাবে।
চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে আবাস প্লাসের আওতায় দেশজুড়ে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র। তার মধ্যে বাংলার এই প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ রয়েছে। যার মধ্যেই এই ৫০ হাজারের বেশি বাড়ির অনুমোদন বাকি। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও অনুমোদন দিতে না পারার তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে অসম, উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাতও। এদিকে সময়ে অনুমোদন না দিতে পারলে বরাদ্দ অন্য রাজ্যের কাছে চলে যাবে। সেকথাও জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। তা নিয়েই কিছুটা চিন্তায় প্রশাসনিক কর্তারা। এর মধ্যেই আবাস যোজনার কাজ দেখতে বারবার এ রাজ্যে দল পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরেও বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনও অনিয়ম খুঁজে পায়নি। বৈঠকে দরাজ সার্টিফিকেট দেওয়াই হয়েছে রাজ্যকে। তাও এ রাজ্যে আবাসের বাড়ি বানানোর জন্য এক টাকাও পাঠায়নি মোদি সরকার। নবান্নের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের দাবি, অন্যান্য বহু রাজ্যেই এখনও অনুমোদনের কাজে তেমন গতি নেই। সেখানে বঙ্গে অবস্থা অনেক ভাল। ৩১ জানুয়ারির পর সময়সীমা যদি ফের কেন্দ্র বাড়ায় সেক্ষেত্রে বাকি কাজটাও এগিয়ে যাবে।
শেষমেশ টাকা দিলে এর মধ্য থেকেই যাদের কাগজপত্র সব ঠিক আছে, সেই সাড়ে ১১ লক্ষ উপভোক্তা পাকা বাড়ি পেয়ে যাবেন। বাংলার জন্য বরাদ্দ বাড়লে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এই তালিকা থেকেই পরবর্তী উপভোক্তা নির্ধারিত হবে। নবান্নের এক কর্তার কথায়, হয়তো উত্তরপ্রদেশে অনুমোদনের কাজে আরও গতি আসলে তাঁদের বরাদ্দের পাশাপাশি বাংলার ভাগ্যেও শিকে ছিঁড়বে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.