গৌতম ব্রহ্ম: রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য পদে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar) নন, আনা হোক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (CM Mamata Banerjee) । এই প্রস্তাব কার্যকর করতে আইন সংশোধনের কাজ শুরু করে দিল আইনসভা। বৃহস্পতিবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে। আইনি প্রক্রিয়াও দ্রুত শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। সংশোধিত আইনটি কার্যকর হলে রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বা চ্যান্সেলর পদে বসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। অর্থাৎ রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রকে রাজভবনের ঘেরাটোপ থেকে বের করে আনতে তৎপর হল সরকার।
শুধু বঙ্গেই নয়, দক্ষিণ ভারতের একাধিক অবিজেপি রাজ্য়ে এই মর্মে আইন সংশোধনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। কেরল (Kerala), তামিলনাড়়ুর (Tamil Nadu) কলেজগুলিতে আচার্য পদে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আনার পক্ষে দু’রাজ্যের প্রশাসন। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য দেশের প্রধানমন্ত্রী। আর রাজ্য়ের ক্ষেত্রে এই পদে সাধারণত রাজ্যপালকেই বসানো হয়। তবে এবার তামিলনাড়ু, কেরলের সঙ্গে একই পথে হাঁটল বাংলার প্রশাসনও।
বৃহস্পতিবার নবান্নে ছিল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক। এই বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আগাম ইঙ্গিত ছিলই। বিকেল হতেই তা প্রকাশ্যে এল। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানালেন, ”রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য এখন রাজ্যপাল। কিন্তু এই সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা হবে। আর তাতে আচার্য হবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য মন্ত্রিসভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। দ্রুতই আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিধানসভায় বিশেষ প্রস্তাব পাঠানো হবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন, ”রাজ্যপাল সব বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করে থাকেন, সহযোগিতা পাওয়া যায় না। প্রয়োজনীয় বিলে সই করতে কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পদে পদে অসৌজন্য ও অসহযোগিতা দেখান। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে অকারণ বিলম্ব হয়। সেই কারণে আমরা এত দ্রুত এই আইনি প্রক্রিয়া কার্যকর করতে চাই।”
আসলে এই প্রস্তাব, আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল বহু আগে। ২০০৭ সালে বিচারপতি মদনমোহন পুঞ্চির নেতৃত্বে ‘পুঞ্চি কমিশন’ তৈরি হয়। সেই কমিশনের ২৭৩ টি সুপারিশের মধ্যে একটি ছিল এটি। রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে বসুন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সুপারিশকে হাতিয়ার করেই তৃণমূল শাসিত বাংলার সরকার মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য পদে বসানোর তোড়জোড় শুরু হল। চলতি সপ্তাহেই রাজভবনের তলব পেয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব ধনকড়ের সঙ্গে দেখা করেন। আর তারপরই রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে রাজভবনের প্রভাবমুক্ত করতে বড়সড় পদক্ষেপ করল সরকার।
মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূলের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)জানিয়েছেন, ”বাংলার রাজ্যপাল আসলে বিজেপির লোক। উনি রাজ্যের সঙ্গে কোনও সহযোগিতা করেন না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে থাকলেও কোনও প্রয়োজনীয় কাজ করেন না। মুখ্যমন্ত্রী সেই পদে আসুন, যথেষ্ট ভাল কাজ হবে।” অন্যদিকে, সিপিএমের প্রতিক্রিয়া, মুখ্যমন্ত্রী আসলে সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের উপাচার্যদের মাথায় বসতে চান মুখ্যমন্ত্রী। শিক্ষাক্ষেত্রকে কলুষিত করার চেষ্টা চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.