তরুণকান্তি দাস: কাঁসার থালা, কাঁসার বাটি। পঞ্চব্যঞ্জন। হাতে টানা রিকশায় শহর ঘুরে দেখা। পায়ে হেঁটে মাতৃদর্শন। ভোরের ময়দান। ট্রামের ঘন্টি। ক্রুজে বসে গঙ্গায় মায়ের ভাসান। সঙ্গী বাঙালি পরিবারের লোকজন। গজল, ঠুমরি, টপ্পার আসরে জাঁকিয়ে বসা। নিখাদ বাঙালি আতিথেয়তায় মোড়া বাংলার সেরা উৎসবে স্বাগত বিদেশিরা। এই মহানগরে যে আন্তরিক আয়োজন সম্পূর্ণ হতে চলেছে মাস তিনেকের মধ্যেই। যে হোমস্টে জাঁকিয়ে বসেছে পাহাড়ে, জঙ্গলমহলে, সেই একই স্বাদ এবার দেবে এই শহর কলকাতা। পাশাপাশি জেলার কিছু এলাকাও বেছে নেওয়া হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে প্যাকেজ। উদ্যোগ পর্যটন দপ্তরের। যা কার্যকর হলে রাজধানীতে পর্যটনের ইতিহাসটাই বদলে যাবে।
বিদেশে হোমস্টে ঘিরে পর্যটনমুখী অর্থনীতির গ্রাফ এখন অনেকটা ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে এর ভূমিকা নিয়ে উচ্ছ্বসিত সংশ্লিষ্টমহল। এই রাজ্যেও পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দাঁড়িয়েছে হোমস্টে নির্ভর পর্যটনের উপর ভর করে। ইদানীং পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরেও শুরু হয়েছে বাড়িতে পর্যটককে রেখে স্থানীয় কৃষ্টি, ইতিহাস, রসনাতৃপ্তির মাধ্যমে পর্যটকদের মন জয়ের পর্ব। সেই ঢেউ এবার মহানগরীতেও আছড়ে পড়ুক, চাইছে সরকার।
তাই কিছু বাড়ি বেছে নিয়ে সেখানে বিদেশিদের থাকা, খাওয়া-সহ নানা সুযোগসুবিধা দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে সরকার থেকে। দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন জানিয়েছেন, “দুর্গাপুজোর চেয়ে বড় উৎসব, প্রাণে দোলা লাগানো, আবেগ উসকে দেওয়া আয়োজন কোথায়। সর্বজনীন এই বাৎসরিক উৎসবের বিশ্বজনীন বিপণন করতে পারলেই তো পর্যটনের বড় সাফল্য পাবে এই শহর। শামিল হতে পারে বাংলাও। তবে এই উদ্যোগে বাড়তি মাত্রা যোগ করতে হোমস্টে গড়া হচ্ছে।” পর্যটন দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, “এজন্য কিছু এলাকা চিহ্নিত করা হবে। বিদেশিদের রাখার, পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো রয়েছে কি-না খতিয়ে দেখে তবেই অনুমতি দেওয়া হবে। তেমন হলে মিলবে কিছু আর্থিক সুবিধাও। সেই সাহায্য নিয়ে কিছু বাঙালি ঢেলে সাজাবে ঘরদোর, শুরু করবে নতুন ব্যবসা। তবে অনুদানের বিষয়টি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি”। তিনি আরও বলেন, “বিদেশিরা পুজোর সময় আসতে চান। কিন্তু সমস্যা হল, অনেক সময় হোটেলে ঘর মেলে না। উপচে পড়ে ভিড়। সেই কথা মাথায় রেখে এবং সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের দিকে তাকিয়েই মহানগরে হোমস্টে গড়ার এমন উদ্যোগ। বড়দিনের উৎসবেও বিদেশিরা আসেন এই শহরে। তখনও ঘর পেতে সমস্যা হয় বলে হোটেল অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর। তাই নয়া উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে তারাও”।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.